মেয়র, কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান বরখাস্ত
জনপ্রতিনিধি শূন্যতায় সেবাবঞ্চিত মানুষ
ইউনিয়ন পরিষদ বহাল থাকলেও বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি পলাতক
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী সিটি ও পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা করেছে। একইভাবে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও পর্ষদ বহাল থাকলেও বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি পলাতক থাকায় সেবাবিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদও ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। বিদ্যমান অবস্থায় সারা দেশের মানুষ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্বের সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়। এ সরকারের প্রায় দুই মাস হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শুধু মেয়র ও চেয়ারম্যানদের স্থলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে রুটিন কার্যক্রম সচল রেখেছে। তবে কাউন্সিলর, সদস্য ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধির শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না। বিশালসংখ্যক জনপ্রতিনিধির বদলে গুটিকয়েক সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এজন্য রাজনীতিক বা সমাজের বিশিষ্টজনদের মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পদে নিয়োগ করে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের এ শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না।
তারা আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৯ আগস্ট ১২ সিটি করপোরেশন ও ৩২৩ পৌরসভার মেয়রদের বরখাস্ত করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর একযোগে ১২ সিটি করপোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা বহাল থাকলেও বেশির ভাগই অফিস করছেন না। এরপর থেকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউপিতে নাগরিক সেবা নেই বললেই চলে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে ২৬ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশন পরিচালনার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পরিষদের জন্য এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এদিকে সব কাউন্সিলরকে একসঙ্গে বরখাস্ত করায় আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য দল থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এছাড়া নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই বহু মানুষ নাগরিক সেবাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার কাছে আসছেন। সরকারের হঠাৎ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে নেওয়া সঠিক হয়নি। একইভাবে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর তানিয়া আক্তার ও হাসনা হেনা এবং কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম। খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলররা কোনো অপরাধ না করলেও বরখাস্ত করে দেওয়া সরকারের উচিত হয়নি। অনেক কষ্ট করে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তাছাড়া কাউন্সিলর শূন্য করায় নাগরিক সেবাও ভেঙে পড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফেরদৌস বেগম মুন্নী জানান, জনগণ সেবা পাওয়ার জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন যে কাঠামো তৈরি করছে, তাতেও মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে না।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউ অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে তাদের সরিয়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সেবা নিশ্চিত করতে রাজনীতিক ও সমাজের বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিলে তাতে ভালো ফল মিলত। সরকারকে জনগণের সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে আরও ভাবতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, স্থানীয় সরকারের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নকাজ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ধাপে ধাপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।