অগ্রণী ব্যাংকে গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাৎ
রসিদ দিলেও টাকা জমা দিতেন না ক্যাশিয়ার
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রসিদ দিলেও টাকা জমা দিতেন না ক্যাশিয়ার
পাবনার সুজানগরে অগ্রণী ব্যাংক নাজিরগঞ্জ শাখায় প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ক্যাশ কর্মকর্তাকে জোনাল কার্যালয়ে ক্লোজ এবং ম্যানেজারসহ দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক পাবনা জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক এইচএম জগলুল পাশা বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক নাজিরগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা (ক্যাশ) কুদরত উল্লাহ পলাশ ৩ বছর আগে ওই শাখায় যোগদান করেন। তিনি একই উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারের ছেলে। পলাশ স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে গ্রাহকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এর সুযোগে তিনি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের জমা দেওয়া প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাহকরা বিভিন্ন সময় ব্যাংকে টাকা জমা দিলেও ব্যাংক কর্মকর্তা (ক্যাশ) পলাশ উক্ত টাকা জমা রেজিস্ট্রার এবং হিসাব নম্বরে পোস্টিং না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। কিন্তু গ্রাহকদের বিশ্বাস রক্ষার জন্য স্বাক্ষর ও সিলমোহর দিয়ে তাদের জমা ভাউচার দিয়ে দিতেন। ফলে গ্রাহকদের পক্ষে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আঁচ করা সম্ভব হয়নি। চলতি মাসের প্রথম দিকে সুজানগর উপজেলার নুরুদ্দিনপুর গ্রামের একজন গ্রাহক ও মেধা ট্রেডার্সের কর্ণধার উজ্জ্বল মৃধা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে পলাশের কাছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জমা দেন। পলাশ যথানিয়মে তাকে জমা ভাউচারও দেন। কয়েকদিন পর ওই গ্রাহক কিছু টাকা উত্তোলন করার জন্য ব্যাংকে চেক জমা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকে তার কোনো টাকা জমা নেই। পরে ব্যাংকে গিয়ে জমা ভাউচার দেখালে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর টাকা জমা দেওয়ার ভাউচার নিয়ে হাজির হতে থাকেন অর্ধশতাধিক গ্রাহক। প্রাথমিকভাবে ৬০ জন গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা ধরা পড়ে। গ্রাহকরা জানান, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের চাপে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রাহকদের ৭৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
ম্যানেজার কামরুজ্জামান কামরুল দাবি করেন, ক্যাশ কর্মকর্তা পলাশ একাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, এই দুর্নীতি ও প্রতারণার সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা ও ক্যাশ কর্মকর্তা দুজনই দায়ী। অগ্রণী ব্যাংক পাবনা অঞ্চল প্রধান ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক এমএইচ জগলুল পাশা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা কুদরত উল্লাহ পলাশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৭৪ লাখ টাকা ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। ক্যাশ কর্মকর্তা পলাশকে বৃহস্পতিবার জোনাল কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয়েছে। এর আগে ম্যানেজার কামরুজ্জামান কামরুলকে প্রত্যাহার করে সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর শাখায় এবং অপর একজন কর্মকর্তা আরমান হোসেনকে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা শাখায় বদলি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।