Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

দুর্নীতিবাজ চক্রের দাপটে কোণঠাসা অন্যরা

তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণ হলেও তারা সংস্থার কর্মনীতি ঠিক করছেন, স্বপদে বহাল

মতিন আব্দুল্লাহ

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি দপ্তর ও সংস্থায় দুর্নীতিবাজরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, বরখাস্ত হয়েছেন; কেউ পলাতক, তদন্ত চলছে অনেকের ব্যাপারে। তবে উলটোচিত্র রাজধানীর বৃহৎ সেবাদানকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি)। নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং তদন্তে প্রমাণিতরাই দাপট দেখাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পেশাদার এবং বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে ফেলেছে দুর্নীতিবাজ চক্র। তাদের সংস্থা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ চক্র একজোট হয়ে লড়ছে এবং অবৈধ অর্থ ছড়ানোয় তাদের দাপটে অন্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও তাদের দিকে ঝুঁকে আছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ডিএসসিসি প্রশাসনের অস্থিরতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল। এছাড়াও ওই চক্রে আছেন সংস্থার প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বে থাকা স্থপতি সিরাজুল ইসলাম এবং প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিজে অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় দুর্নীতিবাজ চক্রটিকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নগর উন্নয়ন অনুবিভাগে দেওয়া এক গোপন পত্রে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন ও মিঠুন চন্দ্র শীল সংস্থার আওতাধীন শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সালুলিয়া এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ৭৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে। ওই প্রকল্পের দুর্নীতির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ২৬ মে এবং ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। অসাধু চক্রের দাপটে তদন্তকাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর নাসিরাবাদ, ডেমরা ও মান্ডা এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্যাকেজ-১৭-এর বিল ও জামানত পরিশোধে মিথ্যা, প্রতারণামূলক প্রত্যয়ন ও জালিয়াতি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় ২৩ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও রহস্যজনক কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া রায়েরবাজার স্লুইচ গেট থেকে লোহার ব্রিজ পর্যন্ত ইনার রিং রোড প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ওই দরপত্রে মোট ব্যয় পরিবর্তন করে প্রধান প্রধান আইটেমের দর বৃদ্ধি, স্পেসিফিকেশন নিুমানে পরিবর্তন করে ইজিপিতে দুইবার বিকিউ পরিবর্তন এবং দরপত্র দাখিলের সময় বৃদ্ধি করে। এসব অনিয়মে ৩০ কোটি টাকা রফা হয়েছে। ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে ওই পত্রে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, কাজ করতে গেলে কিছুটা ভুলত্রুটি হতে পারে। সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী ফাইলগুলো নেতিবাচক নোট দিয়ে প্রকৌশলীদের দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এজন্য প্রকৌশলীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ এবং তার প্রতি অনাস্থা দিয়েছেন। আরও বলেন, অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, তিনি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নোট দিয়েছেন; অথচ তার অধীনে আমরা সবাই। ওই নোটে বলেছেন, তিনি অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন। এটা চিন্তা করা যায় না। তবে এ বিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীর গোপন পত্রে বলা হয়েছে, সংস্থার যান্ত্রিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান কয়েকটি দরপত্রের মালামাল সংগ্রহ না করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ভুয়া বিল পরিশোধ করেন, যা তদন্তে প্রমাণিত। এ ঘটনায় দায়ী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত হলেও ডিএসসিসি প্রশাসন তা দুদকে না পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করছে। এছাড়া ব্যাক ডেটে দুটি কাজের ৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার বিল পরিশোধের ঘটনা প্রমাণিত হয়। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে প্রকৌশলী আনিছুর রহমানের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গোপন পত্রে আরও বলা হয়েছে, সংস্থার প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বে থাকা স্থপতি সিরাজুল ইসলাম ‘কেস’ প্রকল্পের পরিচালক থাকাবস্থায় ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই প্রকল্পের স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তৈরির নামে সরকারের বিপুল অর্থ লোপাট করেন। বাস্তবে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়নি, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আনসারদের বেডরুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ডিসিএনইউপি প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালনের সময় স্থপতি সিরাজুল ইসলাম কোনো কাজ না করিয়ে কনসালটেন্টকে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আরও ১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধের আয়োজন করেন, যা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায়। অভিযোগ সম্পর্কে স্থপতি সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতিবঞ্চনাসহ নানা কারণে চাকরির প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। যদি বিকল্প কোনো সুযোগ থাকত, তাহলে চাকরিই ছেড়ে দিতাম। কতজন কতকিছু লিখবে, কেউ কিছু লিখলেই তা সত্য হয়ে যাবে-বিষয়টা এমন নয়।

গোপন পত্রে জানানো হয়েছে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান সুদমুক্ত গাড়ি ক্রয়ের পরও নতুন ৩টি পাজেরো জিপ ব্যবহার করছেন। সেগুলো হলো ঢাকা মেট্রো-ঘ-১২-৯৬৯৯, ১৮-০২০৭ ও ১৫-৫১৬৪। প্রতিমাসে এ তিনটি গাড়িতে তিনি ১ হাজার ১০০ লিটারের বেশি তেল ব্যবহার করছেন।

এদিকে ডিএসসিসির দুর্নীতিবাজ চক্রের হয়ে কাজ করছেন সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা আনু নাসের-এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা। এসবের বিনিময়ে তিনি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে লাভবান হচ্ছেন বলেও তাদের অভিযোগ। কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির উপ-অর্থ সম্পাদক আবু নাসের মেয়র তাপসের সময় বেপরোয়া ছিলেন। দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করলেও ওইসব পত্রিকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতেন-এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। তখন তাকে তারা বুঝিয়েও পারেননি। এসব ঘটনায় সংস্থার ব্যাপারে গণমাধ্যমে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। যার মূল ভূমিকায় ছিলেন জনসংযোগ কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের যুগান্তরকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার কাজ সংস্থার স্বার্থ দেখা, এর বাইরে আমি কিছু করছি না। যেসব তথ্য প্রকাশ করা যায় বা গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টদের দেওয়া যায়, সেগুলোর বাইরে আমি সংস্থার স্বার্থহানিকর কিছু কখনো করিনি।

এছাড়া ডিএসসিসিতে পেশাদার কয়েক কর্মকর্তাকে আওয়ামীপন্থি তকমা দিয়ে দুর্নীতিবাজ চক্রের সহায়তায় মারধর করেছেন শ্রমিক দল নামধীরা বহিরাগতরা। তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকাও নিয়েছেন। নতুন করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করছেন। দুর্নীতিবাজ চক্রটি তাদের হাতে রেখে পেশাদার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। অথচ মেয়র তাপসের সময়ে তারা সবাই সংস্থার লোভনীয় পদ-পদবি এবং প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। এখনো তারা সেসব পদ-পদবিতে আছেন। সেসময় নিজেদের আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক দাবি করলেও এখন সবাই নিজেকে বিএনপিপন্থি বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ৫ আগস্টের পর সংস্থায় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা বহিরাগতদের নগর ভবনে এনে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। ওই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়কে তার ভূমিকা ও বাস্তবতা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সত্য ও প্রমাণিত তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করায় এবং শাস্তি দেওয়ায় ডিএসসিসির দুর্নীতিবাজ চক্র অমার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা দেয়। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় আমি ঐচ্ছিক অবসরের আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ ঐচ্ছিক অবসর না দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমি উচ্চ আদালতে গেলে ডিএসসিসির ওই বরখাস্তাদেশ বাতিল করে আমাকে স্বপদে বহাল করেন। এরপর আমি কাজে যোগদান করি এবং ঐচ্ছিক অবসর না নেওয়ার অভিপ্রায়ের কথা লিখিতভাবে জানাই। কয়েকদিন অফিসও করেছি। কিন্তু দুর্নীতিবাজ চক্রের দাপটে ডিএসসিসি প্রশাসন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ৫ সেপ্টেম্বর আমাকে ঐচ্ছিক অবসর দিয়েছে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তার ব্যাপারে ডিএসসিসি তিনটি আদেশ হয়েছে। এক আদেশের মাধ্যমে তার বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহিত প্রদান করা হয়েছে। আরেক আদেশে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্য আদেশে তাকে ঐচ্ছিক অবসর দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রকৌশলী জানান, ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন হয়নি বা কখনো তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হয়নি। দুর্নীতিবাজ চক্র প্রথমবারের মতো অভিযোগ দিলেও তা থেকে কর্তৃপক্ষ তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। এ অবস্থায় তাকে ঐচ্ছিক অবসর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি ঐচ্ছিক অবসরের আবেদন প্রত্যাহর করে নিয়েছি।

এসব বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রধান প্রকৌশলী সবাইকে নেতিবাচক হিসাবে উপস্থাপন করেন। এজন্য প্রকৌশলীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ। তার বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগও তারা করেছেন। এটা অবশ্য তদন্তে প্রমাণ হওয়া ছাড়া বলা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে, কিছু চলমানও আছে। যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেসব দুর্নীতিরও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আলাপকালে তিনি তার অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম