Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

চট্টগ্রামে ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষ

পটিয়ায় মাটির দেওয়াল ধসে শিশুর মৃত্যু

Icon

এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষাধিক মানুষ

চট্টগ্রামে ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা

চট্টগ্রামে গত তিন দিন ধরে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত রোববার রাত থেকে অতি ভারি বর্ষণে রূপ নেয়। সোমবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। ভারি বৃষ্টিপাতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এদিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এমন আবহাওয়া আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এরই মধ্যে সোমবার সকালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় মাটির দেওয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৬ বছরে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে অবাধে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তুলেছিল। এ সময়ে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে আড়াইশ’ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে সরকারি-বেসরকারি ২৬টি পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ছয় হাজার ৫৫৮টি। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি পাহাড়ে বসবাস করছে ছয় হাজার ১৭৫টি পরিবার। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩৮৩টি। রেলওয়ের মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ পরিবারের বসবাস নগরীর ফয়’স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিল পাহাড়ে। এখানে চার হাজার ৪৭৬টি পরিবার থাকে। এছাড়া মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল এলাকায় বসবাস ৪৩১টি পরিবারের। লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে বসবাস ২৮৮টি পরিবারের। রেলওয়ের মালিকানাধীন ষোলোশহর স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৭৪টি, নগরীর জাকির হোসেন সড়কে পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি, পলিটেকনিক হক স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাঁচটি পরিবারের বসবাস রয়েছে। সব মিলিয়ে ছয় হাজার ৫৫৮টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রেলওয়ের জমিতে রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩২টি স্থাপনা। রেলওয়ের পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে দিতে গত ১৪ জুলাই অভিযান পরিচালনা করার কথা ছিল। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্য না পাওয়ায় সেই অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। গত বছরের তুলনায় অবৈধ বসবাসকারীদের সংখ্যা চলতি বছর আরও বেড়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যুগান্তরকে বলেছিলেন, ‘পাহাড়ে কিভাবে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ গেল সেটি সভা করে সিদ্ধান্ত করার বিষয় নয়। গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়। মূলত পাহাড় রক্ষার সবচেয়ে বড় বাধা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে রাখায়, তাদের সঙ্গে প্রশাসন হয়তো পেরে উঠছে না। যারা প্রকৃত অর্থে অসহায় তাদের জন্য সরকারি খাস জমিতে বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করে পাহাড়গুলো রক্ষা করা যেতে পারে।’

২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত : লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুল বারেক বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ১২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত আমরা অতি ভারি বর্ষণ হিসাবে রেকর্ড করেছি। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত আছে। এজন্য ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এটা আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভারি বৃষ্টিতে সোমবার সকালের দিকে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়াসহ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়া নগরীর জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় নিচতলার বাসা, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। হাঁটুপানি মাড়িয়ে মানুষ চলাফেরা করেছেন। পানি মাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে অনেক এলাকায় জমে থাকা পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় মাটির ঘরের দেওয়াল ধসে আট বছর বয়সি এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের চাটরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিঝুম আক্তার স্থানীয় চাটরা নোমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপা পড়ে শিশুটি মারা যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম