কুমিল্লায় সক্রিয় চোরাকারবারি চক্র-১
সীমান্ত দিয়ে যাচ্ছে ইলিশ আসছে মাদক
দেশের বাজারে ইলিশ সংকট-চড়ামূল্য, কম দামে মিলছে ত্রিপুরায় * প্রতি রাতে সীমান্তের ২০ পয়েন্ট দিয়ে পাচার
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। রাতে জেলার অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব ইলিশ পাচার হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মাছের বিনিময়ে মাদক নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাছাড়া ভরা মৌসুমেও জেলার অভ্যন্তরীণ বাজারগুলোতে ইলিশের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রুপালি ইলিশ কুমিল্লার বাজার থেকে কম দামে মিলছে ত্রিপুরার বাজারগুলোতে। সরেজমিন অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইলিশের জন্মভূমি কুমিল্লার অদূরে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আশপাশের পদ্মা-মেঘনা নদী এবং সাগর মোহনায়। এক দশক আগেও জেলার বাজারগুলো চাঁদপুরের মৌসুমি ইলিশে ভরপুর থাকত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন এবং চোরাকারবারিদের কালো থাবায় ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। প্রতিদিনই চোরাকারবারি সিন্ডিকেটগুলো আড়ত থেকে বেশিরভাগ ইলিশ ক্রয় করে পাচার করে দিচ্ছে। বাজারে ইলিশের সংকটের কারণে ফড়িয়া বিক্রেতারা চড়ামূল্যে বিক্রি করছে। এতে জাতীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন চাঁদপুরের বিভিন্ন ঘাট, একই জেলার হাইমচর এবং লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পিকআপে পিকআপে ইলিশ আসে কুমিল্লায়। এর বেশিরভাগই চোরাকারবারি সিন্ডিকেটগুলো কিনে নেয়। সন্ধ্যার পর ইলিশবাহী বহু পিকআপ সরাসরি কুমিল্লার ভারত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে চলে যায়। সদর দক্ষিণ উপজেলার মথুরাপুর, যশপুর, মুড়াপাড়া, দলকিয়া, আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জালা, খাড়েরা, বুড়িচং উপজেলার তেলকুপি বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, সংকুচাইল, আশাবাড়ী সীমান্তের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এসব ইলিশ পাচার করে। এতে জড়িতরা অধিকাংশই মাদক কারবারি। ফলে তারা ইলিশের বিনিময়ে ওপার থেকে মাদক নিয়ে আসছে। সরেজমিন সীমান্তের নিশ্চিন্তপুরে কথা হয় স্থানীয় আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার একজন শীর্ষ চোরাকারবারি প্রতিদিন ৫-৬ পিকআপ ইলিশ ভারতে পাচার করছে। তার নাম বললে আমার ক্ষতি হবে।
তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবাই চিনে। বড়জালা এলাকার কামাল হোসেন বলেন, আমরা বাজারে গিয়ে ইলিশ পাই না, কিন্তু রাতের আঁধারে হাজার হাজার পিস ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। সদর দক্ষিণ উপজেলার দলকিয়া সীমান্তের বাসিন্দা নুরু মিয়া বলেন, প্রতিদিন প্রচুর ইলিশ ভারতে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে আসছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, থ্রি-পিস, শাড়ি, মোবাইল ফোনসহ নানা চোরাই পণ্য।
আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিতরা সবই জানে। এগুলো বলে আমরা বিপদে পড়তে চাই না। এ বিষয়ে কুমিল্লা ডিবির ওসি রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ইলিশ পাচার ঠেকাতে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। সীমান্ত এলাকায় রাতে টহল আরও জোরদার করা হবে। কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে কখন ইলিশ পাচার হচ্ছে তা আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জেনেছি অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।