ডাকাতির টাকা ভাগবাঁটোয়ারায় দ্বন্দ্ব
সরদারের সঙ্গে বেয়াদবি করায় আজাদ খুন
নৌ-ডাকাত সরদার মুজিবুর আকন ওরফে টেক্কার দলে কাজ করত আজাহার ওরফে আজাদ। সে ছিল অনেকটা প্রতিবাদী। প্রতি রাতেই তুরাগ নদে বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি করত এ ডাকাতদল। ডাকাতির টাকা ও মালামাল ভাগবাঁটোয়ারার সময় টেক্কা অন্য সহযোগীর চেয়ে আজাদকে কম দিত। এ নিয়ে আজাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। সে ডাকাত সরদার টেক্কার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি করে। আর এ দ্বন্দ্বের জেরেই আজাদকে নৌকায় খুন করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় তুরাগ নদে। এই হত্যার ৬ বছর পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে ডাকাত সরদার টেক্কা ও তার সহযোগী শামীমকে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের বাসিন্দা আজাদ গাজীপুরে তার বড় ভাই শাহজাহানের বাসায় থাকত। পরিবারের কাছে সে নিজেকে নদীতে ট্রলারচালক হিসাবে পরিচয় দিত। কিন্তু আড়ালে সে ডাকাতি করত। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি আজাদ। এরপর তার বড় ভাই শাহজাহান পুলিশের শরণাপন্ন হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১৭ ডিসেম্বর আমিনবাজার এলাকায় তুরাগ নদে একটি লাশ ভেসে উঠে। খবর পেয়ে বড় ভাই শাহজাহান গিয়ে আজাদের লাশ শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। পুলিশ এই মামলার কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি মামলাটি পিবিআই ঢাকা জেলার ওপর ন্যস্ত করা হয়। এরপর তদন্ত শুরু করে পিবিআই।
পিবিআই জানায়, বরগুনার তালতলীর বাসিন্দা মজিবুর আকন ওরফে টেক্কা ঢাকায় এসে দিনে রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন কাজ করত। আর সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাতে করত নৌ-ডাকাতি। দীর্ঘদিন সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর অংশে তুরাগ নদে বালুবাহী বাল্কহেড ও অন্য নৌযানে চাঁদাবাজি ও লুটপাট করত এ দলটি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে জিম্মি করে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এই দ্বন্দ্বের শুরুটা হয়েছিল নদীতে। রাতে নদীতে যখন বাল্কহেডগুলো যাতায়াত করত, তখন মালিক থাকতেন না। শ্রমিকরাই বাল্কহেড দিয়ে মালামাল কিংবা বালু পরিবহণ করতেন। ওই সময়কে ডাকাতরা বেছে নিত। তাদের জিম্মি করে এই ডাকাতদল মুক্তিপণ আদায় করত।
ডাকাত সরদার টেক্কার দল ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে গাবতলী ঘাট থেকে আশুলিয়ার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয়। একটি ট্রলারে নদীপথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা। পথে ডাকাতির টাকা নিয়ে এই দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন ওরফে লেদুর সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়ায় আজাদ। একপর্যায়ে টেক্কার সঙ্গেও বিবাদে জড়ায় সে। এ সময় টেক্কা হুংকার দিয়ে বলে, আমার হাতে গড়েছি তোমাকে। আর আমার সঙ্গেই বেয়াদবি, বেশি বেড়ে গেছ, এক্কেবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব। এরপর ধারালো চাপাতি দিয়ে আজাদকে আঘাত করে সে। পেছন থেকে আঘাত করতে থাকে শামীম ও লেদু। তাদের উপর্যুপরি আঘাতে মারা যায় ডাকাত আজাদ।
তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা তথ্যের ভিত্তিতে ৬ বছর পর পিবিআই’র হাতে ধরা পড়ে মজিবুর ও তার সহযোগী শামীম হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তারা। আরেকটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে আছে লেদু।
পিবিআই ঢাকা জেলার এসপি কূদরত ই খোদা বলেন, এই হত্যার সঙ্গে অন্য যারা জড়িত ছিল তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পিবিআই জানিয়েছে, টেক্কা গাজীপুরে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি গাজীপুরে। নদীপথে ডাকাতি সংঘটিত করে সে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে গা ঢাকা দিত। তার পেছনে কোনো রাঘববোয়াল আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পিবিআই।