সিলেটে টিলার পাদদেশ
ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ১০ হাজার মানুষের
সংগ্রাম সিংহ, সিলেট
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা ছিল। আয়তন ছিল ৪ হাজার ৮১১ একর। এ তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের এ হিসাবেই শুভংকরের ফাঁকি আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে টিলা-পাহাড়ের যে আয়তনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা সিলেটের একটি চা বাগানের মধ্যেই আছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এমন তথ্য নথিভুক্ত ও গণমাধ্যমে সরবরাহ করছে সরকারের এ অধিদপ্তর। তবে আয়তন যাই হোক, এখন এসব টিলা ক্রমশই বিলীন টিলাখেকোদের আগ্রাসী থাবায়। টিলা গ্রাসের সঙ্গে হচ্ছে প্রাণহানিও। এক দশকে টিলাধসে জীবন্ত সমাধি হয়েছে প্রায় ৪০ জনের। তারপরও থেমে নেই এ মৃত্যুমিছিল। প্রতিবছরই বর্ষার শুরুতে প্রাণ হারাচ্ছেন টিলার পাদদেশের বাসিন্দারা। প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব পালনের অনেকটা ইতি টানে প্রশাসন। অথচ ২০১২ সালে টিলার পাদদেশের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উচ্চ আদালতের আদেশ এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে সেই অতীতের মতোই এখনো উদ্যোগ নেওয়ার কথাই বলছে।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার জানান, ১২ বছর আগের উচ্চ আদালতের রায় দ্রত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককে ১৫ জানুয়ারি এবং বিভাগীয় কমিশনারকে ২০ মার্চ এ চিঠি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসককে জেলা এবং বিভাগীয় কমিশনারকে বিভাগের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয় চিঠিতে। অথচ তারপরও থামেনি টিলা কাটা, টিলার পাদদেশের বাসিন্দারা মাটিচাপা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা।
এ ব্যাপারে যুগান্তরের সঙ্গে কথা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের। তিনি দাবি করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। সোমবার টিলাধসে একই পরিবারের তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে প্রধান করা হয়েছে একজন এডিসিকে।
যুগান্তরের সঙ্গে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলামের সঙ্গেও। এক যুগ আগের দেওয়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসের সঙ্গে আলাপ না করে এ ব্যাপারে কোনো জবাব দিতে পারছি না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম) দাবি করছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের করা সিলেটের পাহাড়-টিলার হিসাবেই গরমিল আছে। সঠিক তথ্য আড়াল করা হয়েছে হীন উদ্দেশ্যে। বাপা জানায়, সিলেট নগর ও জেলায় গত এক দশকে টিলাধসে ৪০ জন মারা গেছেন।
সোমবার সকালে সিলেট নগরীর চামেলীবাগে টিলাধসে একটি পরিবারের সবাই নিহত হন। মাটিচাপা পড়ে নিহত হন আগা করিম উদ্দিন, স্ত্রী শাম্মী আক্তার রোজী ও তাদের দুই বছরের ছেলে নাফিজ তানিম। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানান শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। তিনি জানান, মারা যাওয়া আগা করিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মো. আগা রফিক উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ টিলাধসেই ১৯৯৭ সালে প্রাণ হারিয়েছিলেন আরেক যুবক। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম জেলা যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। তিনিও টিলা কাটার পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে তাকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল চামেলীবাগ পরিদর্শন করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেটের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তারা টিলা কাটা বন্ধে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।