Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার

ট্রাক ভরে ভাগাড়ে ফেলা হয় ভাত

নিম্নমানের খাবার খেতে পারেন না বন্দিরা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাক ভরে ভাগাড়ে ফেলা হয় ভাত

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের ট্রাক ভর্তি করে বিপুল পরিমাণ ভাত ও তরকারি ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। বন্দিদের জন্য রান্না করা এসব ভাত ও তরকারি সকাল হলেই উত্তর নগরীর সিটিহাট এলাকার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে নিয়ম করে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভাগাড়ে ফেলতে যাওয়ার একটি ভিডিও ও ছবিতে তা ধরা পড়েছে। এ কারাগারের খাবারের মান নিয়ে বন্দি ও স্বজনদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যদিও কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভাত-তরকারি নয় খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয় ভাগাড়ে।

বন্দি ও স্বজনদের অভিযোগে জানা যায়, কারাগারে প্রতিদিন যে ভাত ও তরকারি রান্না করা হয় সেসব নিম্নমানের হওয়ায় তা কোনোভাবেই খেতে পারেন না বন্দিরা। ঠিকাদারের মাধ্যমে কাঁকর ও কালো দানাযুক্ত নিম্নমানের চাল সরবরাহ আসে এ কারাগারে। এসব ভাত বেশিরভাগ বন্দি খেতে না পেরে কারা ক্যান্টিন থেকে নিজের টাকায় খাবার কিনে খান। যাদের টাকা নেই তারাই এসব খাবার খেতে বাধ্য হন। এছাড়া বন্দিদের তিন বেলা খাবারের জন্য যে পরিমাণ সরকারি বরাদ্দ থাকে, সে অনুযায়ী তারা খাবার পান না।

জানা গেছে, বন্দিদের চার শ্রেণিতে ভাগ করে তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খাবার ও খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করা রয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রেণির বন্দিদের তিন বেলা খাবার দিতে হবে। সকালে দিনের কাজ শুরুর আগে, দুপুরে ও বিকালে লকআপে নেওয়ার আগে খাবার দেওয়া হয়। বন্দির শ্রেণিভেদে সকালের নাস্তায় থাকার কথা রুটি অথবা পাউরুটি, চিনি, গুড়, ডাল, দুধ, জেলি, ডিম, ঘি অথবা মাখন, কলা ও চা। দুপুরের খাবারে থাকার কথা ভাত অথবা রুটি, মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ডাল। রাতে ভাত অথবা রুটি, মাছ অথবা মাংস, শাক-সবজি ও ডাল দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

এ কারাগারের ডায়েট চার্ট বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বন্দির শ্রেণিভাগ অনুযায়ী তাদের একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। সাধারণ বন্দিদের কখনো মাখন বা দুধ দেওয়া হয় না। তবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিকে ঘি, মাখন, জেলি, দুধ ও চা দেওয়া হয়। আদালতগামী বন্দিদের দুপুরে বরাদ্দ রয়েছে ১০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি, ১টি সিদ্ধ ডিম, একটি ২৫০ এমএল পানির বোতল। যদিও অভিযোগ রয়েছে, তাদের এসব খাবার কখনোই দেওয়া হয় না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্দিদের স্বজনরা আদালত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন।

কারাগার ফেরত একাধিক বন্দির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডায়েট চার্টের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী কখনো কোনো খাবার দেওয়া হয় না। যারা টাকা খরচ করে কারা হাসপাতালে জায়গা পেয়ে যান তাদের কিছু ভালো খাবার সরবরাহ করা হয়। কারাগারে চালের মান খুবই নিম্নমানের। তরকারিতে তেল-মসলা প্রায় থাকে না বললেই চলে। ডাল পানির মতো এবং ডালে বিশেষ ধরনের গন্ধ থাকে। রুটি, পাউরুটি ও কলার আকার বেশ ছোট। গুড়ও খাবার উপযুক্ত নয়। আর এ কারণেই রাত শেষে কারা কর্তৃপক্ষ উদ্বৃত্ত ভাত ও তরকারি ট্রাকে করে ভাগাড়ে ফেলে আসে।

আরও জানা গেছে, কারাগারে রান্না করা খাবার বন্দিদের মাঝে বিতরণের আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের মান পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম রয়েছে। এ কারাগারের খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভাত ও তরকারি অপচয় হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কারাগারে তিন হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন। তাদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাবার রান্না হয়। কিছু অবশিষ্ট থাকাই স্বাভাবিক। এছাড়া কারাগারের খাবারের উচ্ছিষ্ট প্রতিদিন সিটি করপোরেশন ট্রাকে নিয়ে ভাগাড়ে ফেলে দেয়। খাবারের মান খারাপের জন্য বন্দিরা খেতে না পারায় ভাত ও তরকারি ফেলে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম