Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ইঞ্জিন-কোচ, চালক-গার্ডের চরম সংকট

বন্ধ ১০৫ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেই

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধ ১০৫ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেই

রেলে আধুনিক ব্যবস্থার অন্তরালে একের পর এক যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে। এবার ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার স্পেশাল’ ট্রেনও বন্ধ হল। ইঞ্জিন-কোচ আর চালক-গার্ডের চরম সংকটে আরও ট্রেন বন্ধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে ১০৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব ট্রেন কবে নাগাদ চালু হবে, তা নিশ্চিত নয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বরং রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া ৭৪ শতাংশ ইঞ্জিন দ্বারা এখনও ট্রেন চালানো হচ্ছে। এসব ইঞ্জিন যে কোনো সময় পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। বন্ধ থাকা ট্রেন থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হতো।

বাংলাদেশ রেলে যখন চালক-গার্ডের সংকটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে-তখন পার্শ্ববর্তী ভারতে চালক-গার্ডহীন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভারতীয় মেট্রো রেলে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাধারণ ট্রেনের ক্ষেত্রেও এমনটা করা হচ্ছে। এজন্য ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের (বিইএল) সঙ্গে চুক্তি করেছে দিল্লি মেট্রো (ডিএমআরসি)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলে নতুন রুটসহ পরপর নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইঞ্জিন ও কোচ যথাযথ সংগ্রহ করা হচ্ছে না। চালক-গার্ড সংকট চরমে উঠছে। স্থাপনা উন্নয়নের সঙ্গে রোলিং স্টক সংগ্রহ ও জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়ন প্রকল্পেরও সুফল মেলবে না।

এদিকে রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর বলছে, বন্ধ ট্রেনের সবকটিই মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন। এসব ট্রেন চালিয়ে রেলকে সবচেয়ে বেশি লোকসান গুনতে হয়। তাছাড়া বন্ধ ট্রেনগুলো যেসব স্টেশন ঘিরে চলাচল করত-সেই সব স্টেশন অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু যাত্রীদের ভাষ্য, ট্রেন গণপরিবহণ ও সাশ্রয় যোগাযোগ মাধ্যম। সাধারণ মানুষের পছন্দের বাহন। ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় সবেচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সর্বশেষ ২৭ মে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৮ এপ্রিল ট্রেনটির চলাচল শুরু হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ এই ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় এবং কক্সবাজার স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়া হতো।

এ প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শুধু পূর্বাঞ্চলে নয়, উভয় (পশ্চিম) অঞ্চলেই ইঞ্জিন-কোচ সংকট রয়েছে। এছাড়া চালক-গার্ডের সংকট তো আছেই। ট্রেন চালাতে ইঞ্জিন-কোচের সঙ্গে পর্যাপ্ত ট্রেনচালক ও গার্ড জরুরি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি গত ঈদে চালু করেছিলাম। ট্রেনটিতে যাত্রী ভরপুর থাকে স্বীকার করে তিনি বলেন, বন্ধ করে দেওয়া এ ট্রেনটি আবারও চালু করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন-কোচ ও লোকবল নিয়োগ সম্পূর্ণ হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আরও অন্তত ৬ থেকে ৭ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।

এদিকে বন্ধ করে রাখা ট্রেনের টিকিট কাউন্টার থেকেই কাটা হতো। অনলাইনে বিক্রি হতো না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা কাউন্টার থেকে টিকিট ক্রয় করে স্বল্প ও দূরযাত্রায় খুব সহজেই ভ্রমণ করতে পারতেন। আখাউড়া-ভৈরব রুটে চলাচলকারী বাল্লা ট্রেন বন্ধ প্রায় দুই যুগ ধরে। এ ট্রেনের যাত্রী আমিনুল ইসলাম রাজীব জানালেন, পূর্বাঞ্চলে চলা অনেক লোকাল-মেইল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এসব ট্রেন ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। আন্তঃনগর কোনো ট্রেন বন্ধ হয়নি-লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন কেন বন্ধ হচ্ছে-প্রশ্ন রাখেন রাজীব।

পূর্বাঞ্চল রেলে শুধু মেইল, লোকাল, কমিউটার ট্রেনই নয়, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলা জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর। ২০০৬ সাল থেকে এ অঞ্চলে চলা ৫৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন সুপরিকল্পিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে ৪৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ১০৫টি ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রায় ২ লাখ যাত্রী ট্রেনে চলাচল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এসব ট্রেন চালুর উদ্যোগ দেখা না গেলেও নতুন ট্রেন চালু করতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা। আন্তঃনগর ট্রেন চালাতে নতুন কোচ-ইঞ্জিন ক্রয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে-লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করতে রোলিং স্টক সংগ্রহ করা হচ্ছে না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট হাসিনা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ২০০৬ সাল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে ৪৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর বেশ কয়েকটি এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা রেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি ট্রেনগুলো চালু করতে। ইঞ্জিন ও লোকবল নিশ্চিত হলেই পর্যায়ক্রমে ট্রেনগুলো চালু সম্ভব হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ট্রেন গণমানুষের হবে। আর গণমানুষের ট্রেন যদি দিনের পর দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়-তখন ট্রেন সাধারণ মানুষের থাকে না। সবার লক্ষ্য প্রকল্পের দিকে। বন্ধ ট্রেন, স্টেশন চালুর উদ্যোগই নেই। এতে রেলের লোকসান যেমন বাড়ছে-সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যাত্রীরা।

বন্ধ ট্রেন চালু করতে ইঞ্জিন ও লোকবল সবচেয়ে জরুরি জানিয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, রেলে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। সরকার একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ইঞ্জিন-কোচও সংগ্রহ করছে। নতুন ইঞ্জিন ও কোচ রেলবহরে যুক্ত হলে এক এক করে বন্ধ ট্রেনগুলো চালু সম্ভব হবে। বন্ধ স্টেশনগুলো স্টেশন মাস্টারসহ প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে চালু সম্ভব হচ্ছে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম