আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
নির্যাতনের থাবা শিক্ষাঙ্গনেও
যৌন নির্যাতনকারী হিসাবে শিক্ষকের নাম আসা চরম উদ্বেগের : অধ্যাপক তানিয়া * যৌন নির্যাতনে অনেক ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় : অধ্যাপক সালমা
শিপন হাবীব
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নারী শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের নানা কর্মসূচি থাকলেও মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রীরা ঝরে পড়ছে। দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা যথেষ্ট কম। এর পরও নানা কারণে বিশেষ করে নিরাপত্তাহীনতা ও যৌন হয়রানিতে ছাত্রীরা শিক্ষাঙ্গন ছাড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা কোচিং সেন্টার-কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। কখনো শ্রেণিকক্ষে, কখনোবা কোচিং সেন্টারে ‘শিক্ষক’ দ্বারা তাদের যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তবে সামাজিক কারণে এবং শিক্ষাঙ্গনে টিকে থাকতে তারা যৌন হেনস্তার বিষয়টি আড়াল করে রাখে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের নিগ্রহ ও নিগ্রহকারী হিসাবে শিক্ষকদের নাম উঠে আসা চরম উদ্বেগের। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে-বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
নির্যাতনের ঘটনায় কিছু শিক্ষক ও ছাত্র জড়িত। সমীক্ষায় বলা হয়-প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮ শতাংশ ছাত্রী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে ১০ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীরা বেশি নাজেহাল হয়। শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে নারীর প্রতি শারীরিক-মানসিক নির্যাতন-পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমন অবস্থায় আজ বিশ্ব নারী দিবস পালিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তানিয়া হক যুগান্তরকে জানান, যৌন নির্যাতনের কোনো ধরন হয় না। সবসময় তা বয়ানযোগ্যও নয়। এটাকে অপরাধীরা নানা কৌশলে কাজে লাগায়। শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতন-সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য জঘন্য-বর্বর ঘটনা। শিক্ষাঙ্গনকে ছাত্রীদের সবচেয়ে নিরাপদ মনে করে অভিভাবকরা। কিন্তু শিক্ষকের হাতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বেশির ভাগ ছাত্রী তা আড়ালে রাখে। কারণ, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে গেলে যদি পড়াশোনা ব্যাহত হয়।
অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধে কমিটি বা সেল থাকলেও সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যাতে তা প্রকাশ পায় সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের আন্দোলনে শিক্ষক মুরাদ হোসেনের অপকর্মের তথ্য প্রকাশ পায়। তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনেও এমন বহু ঘটনা ঘটছে। সবাই সোচ্চার হলে অপরাধীরা শাস্তি পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে উদ্বেগ চরমে ওঠে এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ, শিক্ষাঙ্গন তো শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও আদর্শের জায়গা। অত্যাচার-নির্যাতন মুখ বুজে হজম করা বা নীরবে শিক্ষাঙ্গন ত্যাগের অন্যতম কারণ পারিপার্শ্বিক চাপ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবার মেয়েদেরই দোষ দেওয়া হয়।
কেরিয়ারের অনিশ্চয়তা তো আছেই। তাই সাহস করে কেউ কেউ এগিয়ে এলেও নানা চাপের মুখে তাদের একটা বড় অংশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপিকা জানান, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু একটিতেও এমন পরিবেশ পাননি-যেখানে ছাত্রী ও নারী কর্মীরা সম্পূর্ণ সুরক্ষা বোধ করেন। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা, অভিযোগ নিরসনপদ্ধতি ও ক্ষমতাবিন্যাসে বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে।