পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর
বিস্ফোরক মামলার বিচার ধুঁকছে সাক্ষী সংকটে
বিচার শুনানি শেষ করতে গড়িমসির অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে * বিচারক সংকটে আটকা হত্যা মামলার আপিল
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর
আজ থেকে ১৫ বছর আগে এ দিনে পিলখানা বিডিআর (বর্তমান নাম বিজিবি) বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আপিল শুনানি ঝুলছে বিচারক সংকটে। পাশাপাশি একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলার বিচার কার্যক্রম ধুঁকছে সাক্ষী সংকটে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের গড়িমসিতে নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না। ২০১০ সালে শুরু হয় এ মামলার বিচার শুনানি। ১৪ বছরে ১ হাজার ৩৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ বছরে মাত্র ২৭২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য তারিখে সাক্ষী হাজির হবে কি না বা সাক্ষ্য শুনানি হবে কি না, কেউ বলতে পারছেন না। এ মামলার ৮৩৪ আসামির মধ্যে ৪০ জন মারা গেছেন। পলাতক আছেন ১৯ জন। বাকি ৭৭৫ জন রয়েছেন কারাগারে। সব মিলিয়ে ৭৯৪ জনের বিচার হচ্ছে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে।
অপরদিকে, ২০১৩ সালে নভেম্বরে পিলখানা হত্যা মামলার রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনকে। হত্যা মামলা থেকে খালাস পান ২৭৮ জন আসামি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাকোর্টে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রায় দেওয়া হয়। রায়ে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। এ ছাড়া ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। খালাস পান ৪৫ জন। আসামিদের মধ্যে ১ জন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআর সদস্য। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে আপিল বিভাগে দণ্ড মওকুফ চেয়ে আবেদন করেন দণ্ডিত আসামিরা। তবে আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে গত চার বছরেও আপিল শুনানির জন্য মামলাটির তালিকাই আসেনি।
নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে মামলা দুটোর বিচার বিলম্বের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন আসামি পক্ষ। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতির কারণে বিচারকাজে বিলম্ব হচ্ছে। বিস্ফোরক মামলার বিচার যে গতিতে চলছে, তাতে আগামী ১৫ বছরেও বিচার শেষ হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। তবে রাষ্ট্রপক্ষ গড়িমসি বা গাফিলতি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, বিচারকাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল যুগান্তরকে বলেন, হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ, যা শুনানির অপেক্ষায় আছে। বিস্ফোরকদ্রব্য মামলায় এখন স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চলছে। প্রতি মাসে দুদিন করে শুনানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৭২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। চলতি বছর মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।
তিনি জানান, হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ২৭৪ জন বিস্ফোরক মামলায়ও আসামি। তাদের খালাসের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির বক্তব্যের সূত্র ধরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টে খালাস পাওয়া আসামিও বিনা বিচারে বিস্ফোরক মামলায় ১৫ বছর ধরে জেল খাটছেন। এই সংখ্যা ২৭৪ জন। তাদের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। কিন্তু সেখানেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। তিনি বিচার বিলম্বের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। বলেন, এক মাসে দুবার শুনানির তারিখ পড়ে। রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে সাক্ষী আসে। না চাইলে আসে না। ১ হাজার ৩৪৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৭২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হলো ১৪ বছরে। এভাবে চললে বলা মুশকিল কোন আমলে এ মামলার বিচার শেষ হবে। ততদিনে আসামিরাও বেঁচে থাকবেন কি না। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের আপিল শুনানিতে বিলম্ব কেন হচ্ছে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলা শুরু করতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষ। অনেক বড় মামলা, শুনানির জন্য চারজন বিচারপতির প্রয়োজন। বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। তিনি বলেন, ১৩৯ জনের ফাঁসি বহালের পাশাপাশি যাদের সাজা কমানো হয়েছে সে বিষয়েও শক্ত অবস্থান নেবে রাষ্ট্রপক্ষ। এএম আমিন উদ্দিন বলেন, সরকার পক্ষ থেকে আমরা আশা করছি যে ট্রায়েল কোর্ট যাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন এবং যাদেরকে হাইকোর্ট কনফার্ম করেছেন বা মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সেটা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে। তিনি বলেন, কিন্তু এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বিচারক নেই।