বরিশালের ৯ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট
কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না
২১৫ চিকিৎসকের বিপরীতে ৭৯টি পদ শূন্য
অনিকেত মাসুদ, বরিশাল
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবকটিতে চিকিৎসক সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এ কারণে স্ট্রোক, কিডনি, হার্ট সমস্যাসহ জটিল রোগীদের জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। সচেতন মহলের দাবি, কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিতে শূন্যপদ পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসকের পদ ও যন্ত্রপাতি সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী-১০টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১৫টি পদ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসকের ৭৯টি শূন্যপদ রয়েছে। হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে পাঁচজন, বাকেরগঞ্জে ২৪ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৯ জন, উজিরপুরে ২৫ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৫ জন, বানারীপাড়ায় ৩১ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ২০ জন, আগৈলঝাড়ায় ২৬ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৩ জন, বাবুগঞ্জে ১৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৪ জন, মুলাদীতে ২৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৬ জন, মেহেন্দিগঞ্জে ১৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১২ জন এবং গৌরনদীতে ২৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৫ জন রয়েছেন।
এসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী সেবা নেয়। জরুরি বিভাগে সেবা নেয় গড়ে ৫০ জন। এছাড়া ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ রোগী ভর্তি থাকে।
আউটডোরের একজন রোগীর ইতিহাস জেনে ব্যবস্থাপত্র দিতে চিকিৎসকের কমপক্ষে ১০-১৫ মিনিট সময় দরকার বলে দাবি চিকিৎসকদের। কিন্তু একজন রোগীকে মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিট সময় দেওয়া সম্ভব হয়। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত কাজের চাপে চিকিৎসকরা মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন।
রোগী হানিফ মিয়া জানান, আধাঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের রুমে ঢুকে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হয়েছি। চাহিদা অনুযায়ী সেবা পায়নি। রোগীর স্বজন জয়নাল জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জটিল কোনো রোগ নিয়ে গেলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলা শহরের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে জটিল রোগের সেবা পাওয়া যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, অত্যধিক রোগীর কারণে কয়েকগুণ বেশি কাজ করতে হয়। এতে করে সেবার মান কমে যাচ্ছে। এরপরও সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমরাও মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগছি।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলাগুলোতে যে সংখ্যক রোগী আছে তাতে সব পদে নিয়োগ সম্পন্ন হলেও জনসাধারণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে না। শূন্যপদে নিয়োগ দিলে সেবার মান কিছুটা বাড়বে। তবে চাহিদা মোতাবেক সেবা নিশ্চিতে চিকিৎসকের পদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া জটিল রোগের সেবা দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, মেডিকেল অফিসার যে সংখ্যক আছে তা দিয়ে আমরা মোটামুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালাতে পারছি। কিছু জায়গায় কনসালট্যান্টের প্রয়োজন। ওখানে কনসালট্যান্ট ছাড়া শুধু মেডিকেল অফিসার গিয়ে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া কনসালট্যান্টের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও ধারাবাহিকভাবে শূন্যপদ পূরণ করছে।