বাড্ডায় দখল, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম
রিকশা এমদাদ ও গ্যাস বাধনের ত্রাসের রাজত্ব
আক্কেল আলীর মোড়ে ১ একর ৬৫ শতাংশ জমি দখল
কায়েস আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এমদাদ ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সহযোগী বাধনের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এলাকাবাসী এমদাদকে চেনে রিকশা এমদাদ বা অটো এমদাদ নামে। কারণ তিনি এলাকার অটোরিকশার টোকেন বাণিজ্যের কর্তা। অন্যদিকে এককভাবে এলপি গ্যাসের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কারণে বাধন পরিচিত গ্যাস বাধন হিসাবে। মানুষের জমি দখল, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত তারা। এলাকায় গড়ে তুলেছেন অবৈধ অটোরিকশার গ্যারেজ। বৈঠাখালি ৩০ ফিটে বাধনের গ্যাসের দোকানটিও দখল করা। সেখান থেকেই মূলত মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। এর দায়িত্বে রয়েছে বাধনের প্রধান সহযোগী বাড্ডা থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজু।
এলাকাবাসী জানান, ফুটপাতের দোকানপাট, লেগুনা ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহণ থেকে তারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ধরনের অপকর্ম চললেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
এলাকায় বাধনের মাদক বাণিজ্যের বিষয়ে ৩৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাধনের দোকানে গিয়ে মাদকাসক্ত কিছু ছেলেকে পাই। তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে, তারা যেন এলকায় মাদকের ব্যবসা না করে।
জানা যায়, একসময় এই এলাকায় অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করত শীর্ষ সন্ত্রাসী চঞ্চল ও আলোচিত শীর্ষ সোনা চোরাকারবারি গোল্ডেন মনির। যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার পর সন্ত্রাসী চঞ্চল আমেরিকা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। যদিও বর্তমানে মনির জামিনে আছেন। মূলত তাদের সহযোগীদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন রিকশা এমদাদ ও গ্যাস বাধন।
সূত্র জানায়, তাদের ক্যাশিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াবা ডিলার ভাইগনা বাপ্পি ও গ্যাস বাধনের আপন ছোট ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর গ্রুপের সহযোগী পলক। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে রয়েছে পলকের অস্ত্র বহনকারী রবিন, মকবুল, পাপ্পু, আনোয়ার, হারুন, তাজুল, স্বপন ও ইমরুল। এছাড়া বাড্ডা ইউলুপের সামনে প্রতিদিন গাড়ি থেকে চাঁদা তোলেন হান্নান ও করিম।
জানা যায়, মেরুল বাড্ডা, কবরস্থান রোড, ডিআইটি প্রোজেক্ট ও ডিআইটি সড়ক হয়ে পোস্ট অফিস গলি থেকে পাঁচতলা বাজার পর্যন্ত চাঁদাবাজির নিরাপদ জোনে পরিণত করেছে এমদাদ ও বাধন। এলাকার সব অটোরিকশা গ্যারেজ থেকে চাঁদা দিতে হয় তাদের। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় সন্ত্রাসী হান্নান, বাপ্পী, পলকসহ অন্যরা। চাঁদাবাজির অভিযোগে পলক ও বাধনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাছাড়া পলক বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হত্যা মামলার আসামি।
আলিফনগরে এমদাদ ও গ্যাস বাধনের রয়েছে একাধিক প্লট। তাদের কাছে ভুক্তভোগী কেউ জমির কোনো ঝামেলা নিয়ে গেলে সেই জমি তারা নিজেরাই দখল করে নেয়। দেশী ল্যান্ড বিডি লি. নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে আক্কেল আলীর মোড়ে সামিউল আহসান গং-এর ১ একর ৬২ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছে এমদাদ ও বাধন। এছাড়া জসীম ও হুন্ডা রফিক নামে দুই ক্যাডার এলাকায় নজরদারি করেন। কেউ কোনো নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করলে তাদের কাছ থেকে ইট, বালু, রড নিতে বাধ্য করেন। জসীম এলাকায় চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও অবৈধ মাটিকারবারি।
স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত আলি বলেন, গোল্ডেন মনির জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর সন্ত্রাসী এমদাদ ও বাধন এলাকায় অরাজকতা শুরু করেছে। এদের মতো চিহ্নিত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে এমদাদ ও বাধনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কেউ দলীয় পদপদবী ব্যবহার করে মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও রিকশার টোকেন বাণিজ্য করলে ছাড় দেওয়া হবে না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বহিষ্কার করা হবে। তিনি এমদাদকে চিনেন না বলেও জানিয়েছেন।
বাড্ডা থানার ওসি ইয়াসিন গাজী যুগান্তরকে বলেন, মাদকের বিষয়ে বরাবরের মতো আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। আমরা এলাকায় টহল জোরদার করেছি। মাদক কারবারি ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছি।