Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

অনিয়ম দুর্নীতি জনবিচ্ছিন্নতায় নওগাঁয় ৩ এমপির ভরাডুবি

Icon

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনিয়ম দুর্নীতি জনবিচ্ছিন্নতায় নওগাঁয় ৩ এমপির ভরাডুবি

নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনের সংসদ-সদস্য ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ১৯০ ভোট। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের আটভাগের একভাগ ভোট না পাওয়ায় তিনি জামানত খোয়াচ্ছেন। 
ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিকের মতো দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নৌকার কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছেন নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) আসনের সংসদ-সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। অন্যদিকে নৌকা নিয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ার হোসেন।

নির্বাচনের পর নওগাঁর পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ও জনবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ওই তিন সংসদ-সদস্যের নির্বাচনে এবার ভরাডুবি হয়েছে।

ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করে নওগাঁ-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ ৮৫ হাজার ১৮০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকায় পেয়েছেন ৬২ হাজার ১৩২ ভোট। সংসদ-সদস্য স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে পেয়েছেন ১১ হাজার ১৯০ ভোট। ছয়বারের এমপি ইমাজ উদ্দীনের এ ফলকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা ভরাডুবি হিসাবে দেখছেন। তবে ইমাজ উদ্দীন ও নৌকার নাহিদ মোর্শেদ পরাজিত হওয়ায় বিস্মিত নন কেউই। বরং অনেকে জোর দিয়ে বলেছেন, কাঙ্ক্ষিত রায় পেতে ভোটারদের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক একজন বর্ষীয়ান নেতা। বয়স ও অসুস্থতার কারণে গত পাঁচ বছর জনগণকে তেমন সময় দিতে পারেননি। বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করায় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনে এরই প্রভাব পড়েছে। তবে এত কম ভোট পাবেন আশা করেনি।’ 

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ব্রহানী সুলতান মামুদের পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শফিকুর রহমান মামুন। তিনি বলেন, ‘ব্রহানী সুলতান মামুদ তৃণমূল থেকে উঠে আসা পরিচ্ছন্ন একজন রাজনীতিক। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে থাকায় এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার জয়টা অনেকটাই অনুমেয় ছিল। নৌকার প্রার্থী ও মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মোর্শেদ দলের পদ ব্যবহার করে অনেক অনিয়ম করেছেন। ভোটে এরই প্রভাব পড়েছে।’ 

নওগাঁ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক আমলা সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসাবে ট্রাকের ছলিম উদ্দিন তরফদার পেয়েছেন ৬০ হাজার ৫১ ভোট। তার পক্ষে ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছলিম উদ্দীন তরফদার, তার ছেলে সাকলাইন আহমেদ, ভাগনে শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এটাই ভোটে ভরাডুবির প্রধান কারণ।’
 
নওগাঁ-৬ আসনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুকের কাছে ৬ হাজার ৭৫৬ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাকের ওমর ফারুক পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৭১৭ ভোট। নৌকার আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭১ ভোট। আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বলেন, মাত্র তিন বছর দায়িত্ব পালনকারী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই সময়ের মধ্যে তার ছেলেমেয়েরা শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। 

অন্যদিকে ওমর ফারুক সুমন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা সাবেক সংসদ-সদস্য ছিলেন। তিনি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া এবার ভোটে আঞ্চলিকতা একটা ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে। 

অন্যদিকে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনে চতুর্থবারের মতো জয় পেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ১ লাখ ১০ হাজার ১৭১ ভোটের বিশাল ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র ট্রাকের প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতা পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৭২৯ ভোট। 

নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদকে ৫১ হাজার ৭৮৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নিজাম উদ্দিন জলিল। নিজাম উদ্দিন জলিল পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭১ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৮৪ ভোট। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম