খুলনা- ৬, ৪ ও ১ আসন
স্বতন্ত্রদের নিয়ে শঙ্কায় নৌকার প্রার্থীরা
আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। কে জিতবেন কে হারবেন- তাই নিয়ে সর্বত্র চলছে হিসাব-নিকাশ। তবে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় বাকি তিনটিতে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে নৌকা।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে খুলনায় জমে উঠেছে নির্বাচনি আমেজ। কোন কোন প্রার্থীর জয় সহজ হবে কোন কোন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে সেই অংক মেলানোর চেষ্টা করছেন ভোটার ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে খুলনা-৬, ৪ এবং ১ আসনে। এছাড়া খুলনা-৫ আসনে ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান খান আকরাম হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। উচ্চ আদালতে আপিলের রায় না পাওয়া পর্যন্ত হিসাব কষছেন না কেউ। তবে অনেকটাই নির্ভার খুলনা-২ ও ৩ আসনে নৌকার প্রার্থী।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে এবার নৌকার প্রার্থী ঘোষণায় চমক ছিল। বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পেছনে ফেলে একেবারে পেছনের সারি থেকে উঠে এসেছেন মো. রশিদুজ্জামান। আসনটির দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ তীব্র। বর্তমান এমপি আকতারুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে টেন্ডার বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, দলীয় কোন্দল সৃষ্টি, জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তার ওপর সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ। তাই এখানে প্রার্থী তালিকায় নাম ওঠে অন্তত এক ডজন নেতার। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে নৌকা পান রশিদুজ্জামান। তিনি পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই বার ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়ায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জিএম মাহবুবুল আলম এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এক সময়ের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতারা তার পেছনে জড়ো হতে শুরু করেছেন। ফলে এ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা করা হচ্ছে।
খুলনা ৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর শক্ত প্রতিপক্ষ হিসাবে মাঠে আছেন সাবেক এমপি মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোর্ত্তজা রশিদী দারা। এছাড়া তিনি খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। প্রথম দফায় মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন তিনি। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় এলাকায় সুজার অনুসারী ও বর্তমান এমপি বিরোধী নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। বর্তমান এমপি সালাম মুর্শেদীর অনুসারীদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ দলীয় নেতাকর্মীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর মোর্ত্তজা রশিদী দারার অনুসারীরা। সবমিলিয়ে আসনটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল। এই আসনে তিনি ২০০৮ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি আর নির্বাচন করেননি। এ আসনে তার শক্ত প্রতিপক্ষ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় উভয় প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে এবারেও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছে বর্তমান এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন। তবে যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়ন আটকে যায়। বর্তমানে সেটি উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য রয়েছে। তিনি মনোনয়ন ফিরে পেলে এখানেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
খুলনা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। আসনটিতে অন্য যেসব দলের প্রার্থী রয়েছেন তারা কেউই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন না বলে মনে করছেন ভোটাররা। খুলনা-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করছেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, নৌকার প্রার্থীর বাইরে দলীয় নেতারা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করতে পারবেন। এটা দলে সিদ্ধান্ত। সুতরাং আমরাও চাই যারা নৌকা পেয়েছেন তারা জনপ্রিয়তা যাচাই করে নির্বাচিত হয়ে আসুক।