অনুমোদিত ৭৫ প্রকল্পের শুরুতেই বিপত্তি
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নির্বাচন সামনে রেখে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চারটি একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া ৭৫টি নতুন প্রকল্পের ভাগ্য ঝুলে আছে। শিগগিরই মিলছে না এসব প্রকল্পের বরাদ্দ। চাহিদা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ পাওয়া যাবে না। তবে আগামী অর্থবছর এগুলো বরাদ্দ পেতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ না পাওয়ায় অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু করা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো এ মুহূর্তে বরাদ্দ পাবে না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। কেননা একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এগুলোর বরাদ্দ পেতে সময় লাগবে। অনুমোদন হলেও পরবর্তী সময়ে আরও যাচাই-বাছাইয়েরও সুযোগ আছে। ফলে অনুমোদন হওয়া মানেই যে কাজ শুরু হয়ে যাবে সেটি নয়। তবে প্রক্রিয়াটা এগিয়ে রাখা হলো। তাহলে এর পেছনে সময় ব্যয় করতে হবে না।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, আগামী সংশোধিত এডিপিতে এসব প্রকল্প বরাদ্দ পাবে কি না, সেটিও নিশ্চিত নয়। তবে যেটুকু জানি, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন এডিপিতে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ চারটি একনেক বৈঠকে অনুমোদনে পাওয়া নতুন প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার ২৬৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশই সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় নতুন ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর অনুমোদন পায় ১২টি নতুন প্রকল্প। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৩১ অক্টোবর অনুমোদন লাভ করে ২৪টি নতুন প্রকল্প। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ৪৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় ২৯টি নতুন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের অনুকূলে এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে চলতি প্রকল্পগুলোয়ও বরাদ্দ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক তদবিরে অনুমোদন পেয়েছে অনেক নতুন প্রকল্প। এমপিরা ভোটারদের বলতে পারবেন তারা প্রকল্প নিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ বিবেচনায় তাড়াহুড়ো করেও কোনো কোনো প্রকল্পে অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, অর্থবছরের ৭/৮ মাস বাকি থাকতে এভাবে নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে যদি বরাদ্দ দেওয়া না হয়, তাহলে অনুমোদন দিয়ে কী লাভ। কেননা প্রকল্পের কাজ শুরু না করা গেলে তো ভোটাররাও বিশ্বাস করতে চাইবে না। এছাড়া তাড়াহুড়ো না করে পরবর্তী সময়ে এগুলো অনুমোদন দিলে যাচাই-বাছাইয়ের যথেষ্ট সময় পাওয়া যেত। সেই সঙ্গে এডিপির আকার যেখানে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, সেখানে ৯৯ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প মানে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে চাপ আসবে। তখন নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে হাত বেঁধে দেওয়ার মতো হবে। এসব প্রকল্পের কারণে আগে থেকেই নতুন বরাদ্দের জায়গা সংকোচন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি ছয় মাস পর অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে বলা যায় না। যেভাবে ডলার সংকট হচ্ছে, সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি কতটা হবে, সেটি ভাবার বিষয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করতেই যদি দেরি হয়, তাহলে ব্যয় বৃদ্ধি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তখন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলবেন, আমাদের কী দোষ? অনুমোদন দিলেও তো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে সরকারকে বাধ্য হয়েই সংশোধন বা ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে। এককথায়-এত নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ার মতো অবস্থা হবে সরকারের। একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণসহ পূবাইল-ধীরাশ্রম রেল লিংক নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন, ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ এবং সারা দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প। আরও আছে ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ-এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক কাজ বাস্তবায়ন, বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহ রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট এবং ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর। এছাড়া বরিশাল সিাট করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প। ফেনী-পরশুরাম-বিলোনিয়া সড়ক উন্নয়ন এবং মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প।