উৎকণ্ঠায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
মনোনয়ন পেলেও জোটের স্বার্থে কাউকে সরে দাঁড়াতে হবে * না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চিন্তা
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, কে পাচ্ছেন না-সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আজ দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে। অথচ এর আগেই এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ শিবির থেকে নানা প্রচার-প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। দিন যতই গড়িয়েছে, ততই এর ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও জোটের সমীকরণে কোনো কোনো প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে হতে পারে। আবার মনোনয়ন না পেলে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করছেন। কাউকে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে অনেক কিছুই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে বিশৃঙ্খল কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান শনিবার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তিনি চন্দনাইশ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, মনোনয়ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা কথা ভেসে বেড়াচ্ছে। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই জানেন না কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সুপারিশের পর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগ পর্যন্ত কোনো কথা চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর ৩টি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু পাওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করবে কেন্দ্র। তাই কে মনোনয়ন পেলেন, কে পেলেন না, সেটা বড় কথা নয়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দেন ২৩২ জন। এর মধ্যে রয়েছেন ১৩টি আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্যরাও। জনপ্রিয় ও এলাকার উন্নয়নে এগিয়ে থাকা সংসদ-সদস্য এবং দলের ত্যাগী নেতারা কেন্দ্রের বিবেচনায় এগিয়ে আছেন-এমন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নানা সমীকরণে দু-একজন ছাড়া বাকি এমপিদের কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা আদৌ মনোনয়ন পাচ্ছেন কি না। যদিও এক সপ্তাহ ধরে শতভাগ নিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন কেউ কেউ। কোন সিনিয়র নেতা কার পক্ষে কেন্দ্রে কথা বলেছেন, কে আশ্বাস দিচ্ছেন, কে দিচ্ছেন না, সেসব কথা ইথারে ভেসে বেড়াচ্ছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ এই আশান্বিত হচ্ছেন তো পরক্ষণে আবার হতাশ হচ্ছেন। আশা-নিরাশার দোলাচলে তারা। এক সপ্তাহ ধরেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ রাজধানীতে অবস্থান করে শেষ চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনি মনোনয়ন বোর্ডের সিনিয়র সদস্য ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ঢাকার বাসভবনও করছে গমগম। মোবারক নামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, মোশাররফ ভাইয়ের বসুন্ধরার বাসায় শনিবারও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল। চট্টগ্রামের অন্তত ৫০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে তিনি দেখেছেন এখানে ভিড় করতে। কেউ তার পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া নিচ্ছেন, শুনতে চাইছেন আশার বাণী। তিনি যাকে যেভাবে পারছেন ‘বুঝ’ দিয়ে বিদায় করেছেন।
রাঙ্গুনিয়া আসনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডা. হাছান মাহমুদ, আনোয়ারা আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং পটিয়া আসনে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন নিশ্চিত বলে নানা দিক থেকে বলা হচ্ছে। তবে সামশুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়া-না-পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রচার-প্রোপাগান্ডা সবচেয়ে বেশি। অন্য আসনগুলোয় কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা আঁচ করা যাচ্ছে না। পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী আসনে মহাজোটের শরিক হিসাবে জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও ফটিকছড়িতে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি হিসাবে আছেন। কর্নেল (অব.) অলি আহম্মদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নির্বাচনে না এলেও মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে আসবে এমনটি শোনা যাচ্ছে। একইভাবে চাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস আজিম-নাজিমের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম, সাইফুদ্দিন আহমদ আল হাসানী আল মাইজভান্ডারীর বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও নির্বাচনে আসবে। জোটের সমীকরণে তাদের যদি আসন দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও কোনো কোনো আসনে প্রার্থিতা শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করতে হতে পারে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তদের জোটের সমীকরণের ‘শিকার’ হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোনো কোনো আসনে জনপ্রিয় বা উন্নয়নের দিক থেকে এগিয়ে থাকা জনসম্পৃক্ত এমপি যদি মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়েন, সেক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন এমনটি শোনা যাচ্ছে। আর তা হলে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি জটিল ও টালমাটাল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।