Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

দেশে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ

শৌচাগার ব্যবহার জটিলতায় ২৫% প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শৌচাগার ব্যবহার জটিলতায় ২৫% প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক

ছবি: সংগৃহীত

বাড়ি থেকে ওয়াশ ফ্যাসিলিটির (পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি) দীর্ঘ দূরত্বের কারণে বেশির ভাগ গ্রামে বা শহুরে বস্তিগুলোতে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হন। ফলে দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তি শৌচাগার ব্যবহার করার সময় মল-মূত্রের সংস্পর্শে আসেন। বিশেষত যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা) বা কমিউনিকেশন লিমিটেশন (যোগাযোগ সীমাবদ্ধতা) রয়েছে তারা ওয়াশ সুবিধাসমূহ ব্যবহার করার সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন। এ ক্ষেত্রে তারা সামাজিক ভয়, মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতনের ভয়, আক্রমণাত্মক প্রাণীদের ভয় এবং রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) ও আইসিডিডিআর-বির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন (ওয়াশ) ও স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক সমীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জনসংখ্যাভিত্তিক সমীক্ষাটির কার্যক্রম হিসাবে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের আট বিভাগের ৩২ জেলায় গবেষণাটি চালানো হয়। এ গবেষণায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে শহর ও গ্রামের ছয় হাজার ৪৫৭ পরিবারের মোট ১৭ হাজার ৫৭৭ জন ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়। সর্বজন গৃহীত ‘ওয়াশিংটন গ্রুপের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলির’ মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ করা হয়। ওই প্রশ্নাগুলোতে ছয়টি ক্যাটাগরির যে কোনো একটিতে কেউ ‘অনেক অসুবিধা’ বা কিছুই করতে পারে না; বলে উল্লেখ করলে অথবা প্রতিদিন এবং অনেক বেশি বিষণ্ন বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাদেরকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭ শতাংশ এবং নারী ৯ শতাংশ। তবে ৫৯ বা এর চেয়ে কম বয়সিদের প্রতিবন্ধিতার হারের (৫ দশমিক ২ শতাংশ) তুলনায়, ৭০ বা তদূর্ধ্ব বয়সিদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার (৪৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওয়াশবিষয়ক সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান সার্বিকভাবে চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে দুই হাজার ৩৭৮ জন প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই পানি সংগ্রহে অসুবিধার (৪৮ শতাংশ) সম্মুখীন হন। ১৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় বাড়িতে খাবার পানি নিজে নিয়ে খেতে পারেন না। এর কারণ হিসাবে বেশির ভাগই (৯০ শতাংশের বেশি) শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ অন্যের ওপর নির্ভশীলতার কথা ব্যক্ত করেছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ (৭৭ শতাংশ) পরিবারে মৌলিক পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা থাকলেও অধিকাংশের প্রবেশপথ এবং অবকাঠামোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্য যেমন : হুইলচেয়ার-বান্ধব প্রবেশপথ (৯৭ শতাংশ), উচ্চতা-সামঞ্জস্যযোগ্য প্যান/কমোড (৯৭ শতাংশ), পানি ও হাত ধোয়ার সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার (৭৪ শতাংশ) অভাব রয়েছে । ফলস্বরূপ, প্রায় ২৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা শৌচাগার ব্যবহার করার সময় মল-মূত্রের সংস্পর্শে আসেন। বাড়ি থেকে ওয়াশ ফ্যাসিলিটির দীর্ঘ দূরত্বের কারণে বেশির ভাগ গ্রামে বা শহুরে বস্তিগুলোতে, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ১২ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবকালীন পণ্য পরিবর্তন এবং ব্যবহার-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য অন্য কারও সহায়তার প্রয়োজন হয়। এ সহয়াতার অপ্রতুলতা প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে ইনকন্টিনেন্স সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত যাদের যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য, এ ইনকন্টিনেন্স সমস্যাটি একটি গুরুতর এবং জরুরি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

আইসিডিডিআর-বির সহযোগী বিজ্ঞানী মাহবুব উল আলম বলেন, ‘এই গবেষণার ফলাফলগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক সুযোগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করবে। যা কেবল অবকাঠামোগত পরিবর্তনই নয়, বরং বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন এবং বাধা মোকাবেলা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এ সমীক্ষাটি মূলত বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং জাম্বিয়াতে বাস্তবায়িত একটি বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ। যা লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর (এলএসএইচটিএম) প্রোগ্রাম ফর এভিডেন্স টু ইনফরমেশন ডিসেবিলিটি অ্যাকশন (পিইএনডিএ), এফসিডিও-এর ও আইসিডিডিআর-বির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বি-স্ক্যান বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম