বিএডিসির জটিল সিদ্ধান্ত
কিশোরগঞ্জে নন ইউরিয়া সার তুলতে সমস্যায় ডিলাররা
এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ ও আসাদুজ্জামান ফারুক, ভৈরব
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএডিসির একটি জটিল সিদ্ধান্তের কারণে কিশোরগঞ্জে নন-ইউরিয়া (টিএসপি-ডিএপি-এমওপি) সার তুলতে সমস্যায় পড়েছেন এমন অভিযোগ ডিলারদের। তাদের বরাদ্দ নন-ইউরিয়া সার তারা কোনো কোনো মাসে দুবারে তুলে থাকেন। বিশেষ করে যেসব ডিলারের বরাদ্দ বেশি তারা আর্থিক অসুবিধায় মাসের বরাদ্দের সার দুবারে ভাগ করে তোলেন। এতে মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত অর্ধেক সার বিএডিসি গুদাম থেকে তুলে নিজ উপজেলা এলাকায় নিয়ে গেলে কৃষকরা সময়মতো সরবরাহ পান। পরে তারা ১৬ থেকে ৩০ তারিখের মধ্য গুদাম থেকে বাকি অর্ধেক সার তোলেন। দীর্ঘদিন এ নিয়মে ডিলাররা কিশোরগঞ্জ, সরারচর, কুলিয়ারচর ও ভৈরব বিএডিসি গুদাম থেকে সার তুলছেন। চলতি মাসে হঠাৎ বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আগের নিয়ম বাদ দিয়ে মাসের বরাদ্দের সার একসঙ্গে তোলার নিয়ম করেছে। এতে বিভিন্ন উপজেলার যেসব ডিলারের মাসিক বরাদ্দ ৫০-১০০ টন দেওয়া হয়েছে তারা টাকার অভাবে একসঙ্গে সার তুলতে পারছেন না। তাই মাসের ১৬ তারিখ পার হয়ে গেলেও এলাকার কৃষকরা যথাসময়ে সার পাচ্ছেন না।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে হাওড়ের ৪ উপজেলায় ডিলারদের নন-ইউরিয়া সার বরাদ্দের পরিমাণ ১০০-১৫০ টন। এ সারের ক্রয় মূল্য ৩০-৩২ লাখ টাকা। আবার বরাদ্দ ইউরিয়া সার তুলতে ২০-২৫ লাখ টাকা লাগে। একসঙ্গে এত সার তোলার মতো পুঁজি সবার নেই বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন একাধিক ডিলার। নিকলীর ডিলার মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক মো. আল-আমিন বলেন, বিএডিসি কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমি যথাসময়ে সার তুলতে পারছি না। দুবারে তোলার সুযোগ দিলে সমস্যায় পড়তাম না। একই কথা বললেন অষ্টগ্রামের ডিলার মীর শওকত আলী ও মিঠামইনের ডিলার মাইনুদ্দিন। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএফএ-এর সভাপতি তারিক আহমেদ বলেন, বিএডিসি একসঙ্গে সার তোলার নিয়ম করেছে। কিন্তু এ ধরনের কোনো নির্দেশনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেয়নি। এ নিয়মে ডিলাররা যথাসময়ে নিতে না পারলে এলাকায় সার সংকট দেখা দিতে পারে।
ভৈরব বিএডিসির সার গুদামের সহকারী পরিচালক শিপন সাহা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমরা দুভাগে সার দিতে পারছি না। বিএডিসি কিশোরগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালক মুনতাসির আহমেদ বলেন, গুদামগুলোতে সার মজুতের স্থান নেই। তাই দ্রুত সার সরবরাহের জন্য এ নিয়ম করা হয়েছে। জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কোনো নির্দেশনার চিঠি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মৌখিক নির্দেশনা।
বিএডিসির জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, আমরা এ ধরনের নির্দেশনা দিইনি। তবে বিষয়টি কিশোরগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পরে জানাব।
কিশোরগঞ্জ জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ মোবাইলে যুগান্তরকে জানান, গুদামে মজুতের জায়গা না থাকায় আমদানি করা সার ট্রাকে পড়ে আছে। ডিলাররা দ্রুত সার সরবরাহ নিলে গুদাম খালি হবে। তিনি বলেন, যাদের পুঁজি নেই তারা ডিলারশিপ ছেড়ে দিতে পারেন। পুঁজি নেই এ যুক্তি মানা যায় না। সময়মতো সার না নিলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। আগের নিয়ম চলবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন।