ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ ৫ বছরেও শেষ হয়নি
মৌখিক পরীক্ষার সাত মাস পরও ফল প্রকাশ হয়নি
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুধু লিখিত পরীক্ষা নিতেই সময় লেগেছে চার বছর। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সাত মাসও অতিক্রান্ত। কিন্তু নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারছে না সমাজসেবা অধিদপ্তর। শূন্য পদের সংখ্যা ৪৬৩। তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পাঁচ বছর সময়ক্ষেপণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে কোনো কিছুই গায়ে মাখছে না সমাজসেবা অধিদপ্তর। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো আর কয়টা দিন, এই তো দিয়ে দিচ্ছি, চূড়ান্ত হয়ে গেছে ইত্যাদি।
জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু ছালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, প্রচেষ্টা ছিল অক্টোবরের মধ্যে নিয়োগ চূড়ান্ত করার। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে এখন যে অবস্থায় আছি সময় বেশি লাগবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। দুদফায় পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এরপর গত বছরের ২১ অক্টোবর দেশের সব জেলায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। বুয়েটের কারিগরি সহায়তায় উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে গত বছর ২৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। চলতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিদিন ১৫০ জনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষার শেষ হওয়ার পর থেকে আরও সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কোনো উদ্যোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, কোন কর্মকর্তা কতজনের নিয়োগ ভাগে পাবেন তা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় চূড়ান্ত নিয়োগ হচ্ছে না। তারা একেক সময় একেকটা বলছেন। তারা বলছে নিয়োগের বিষয়টি বুয়েট এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। এটা নিয়োগপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা আরও জানান, মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তর এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগে নিজেদের আত্মীয়, পরিবারের সদস্য এবং দলীয় নেতাকর্মীর জন্য সুপারিশ করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে অগ্রিম লেনদেনও করেছেন। কিন্তু এখন হিসাব মেলাতে পারছেন না।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে যারা আবেদন করেছেন, তাদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ। আবার অনেকের এটাই ছিল চাকরির শেষ ভাইভা। তাই আশায় আছেন, চূড়ান্ত ফলাফলে ভালো কিছু হবে।
চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা আহমাদুল আনাম নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, এ চাকরিতে আবেদন করেই মনে হয় ভুল করেছিলাম। দুবার লিখিত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। একবার তো ঢাকায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পর জানা গেছে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পাঁচ বছরেও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পারেনি। একটা চাকরির জন্য আর কত অপেক্ষা করলে কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়োগ দেবে। অসংখ্য আনামের একই প্রশ্ন-সংশ্লিষ্টদের স্বেচ্ছাচারিতা দেখার কি কেউ নেই।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মীর (ইউনিয়ন) শূন্য পদের সংখ্যা ৪৬৩। আবেদন করেছিলেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে পরীক্ষার আগের দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার তা স্থগিত করা হয়। পরপর দুবার এ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের অনেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।