বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য
সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথ চালুর তোড়জোড় চলছে
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের সঙ্গে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় রাজশাহীর পদ্মা তীরবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে নৌবন্দর চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বল্প খরচে ও কম সময়ে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য সম্ভাবনাময় সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের কার্যক্রম শিগগির চালু হবে বলে জানা গেছে।
সুলতানগঞ্জ নৌঘাটের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ময়া নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া হবে। ২০২০ সালে এই বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নৌ প্রটোকল স্বাক্ষরিত হলেও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সম্ভাব্য এই নৌপথটি চালু হয়নি এখনো।
এদিকে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালুর প্রাক-প্রস্তুতি দেখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফার নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল শুক্রবার পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত প্রস্তাবিত সুলতানগঞ্জ নৌঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের দলটি স্পিডবোটে করে সুলতানগঞ্জ-ময়া প্রস্তাবিত পদ্মার নৌ-চ্যানেলটির বাংলাদেশ অংশ ঘুরে দেখেন। এ সময় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অতিরিক্ত পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ উদ্দিন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর ও নৌচ্যানেল পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য শুরু হবে। এতে সময় যেমন অনেক কম লাগবে তেমনি পণ্য পরিবহণ ব্যয়ও অনেক কমে আসবে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। সুলতানগঞ্জ-ময়া একটি লাভজনক ও চমৎকার নৌরুট হতে পারে।
পরে বিকালে বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধিদলটি নগর ভবনে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা প্রস্তাবিত নৌবন্দর ও নৌপথটি চালুর জন্য রাজশাহী মেয়রের সহযোগিতা কামনা করেন। মেয়র লিটন বলেন, সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথে বাণিজ্য শুরু হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই বিপুলভাবে লাভবান হবেন। বর্ষাকালে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নৌপ্রটোকলের আওতায় ২০২০ সালের অক্টোবরে সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি চালুর কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। এর আগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএর সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ওই সময় সংস্থার উদ্যোগে সুলতানগঞ্জে শুল্ক স্টেশন স্থাপনসহ কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।
রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমবে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী ও ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল বাণিজ্য চালু ছিল। বাংলাদেশ থেকে এই পথে ভারতে বিপুল পরিমাণ পাট রপ্তানি হতো। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এই মাছ এই নৌপথে ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব। আবার ভারত থেকে স্থলবন্দর পথে প্রচুর পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর বাংলাদেশে আসে। এই নৌপথে পাকুড় পাথর আমদানি হলে পরিবহণ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। ভারত থেকে কয়লা, সিমেন্ট তৈরির উপকরণ ফ্লাই অ্যাশ, ক্লিংকার আমদানিও সম্ভব এই নৌপথে।
জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে ঝাড়খন্ডের উন্নতমানের ‘পাকুড় পাথর’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নৌপথটি মূলত পাকুর পাথর আমদানি অনেকটাই সহজ করবে। নৌপথটি চালু হলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে ভালো সড়ক যোগাযোগের কারণে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভারতের ময়া থেকে সুলতানগঞ্জ নৌঘাট পর্যন্ত পথটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি নৌপথ। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু হলে রাজশাহী অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষকে বলেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নৌপথ চালু করতে।