Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

প্রতারণার নতুন ফাঁদ

গ্রীন ডেল্টা হাউজিং এখন গোল্ড স্যান্ডস গ্রুপ!

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রীন ডেল্টা হাউজিং এখন গোল্ড স্যান্ডস গ্রুপ!

ছবি: যুগান্তর

গ্রাহকদের শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড নবরূপে হাজির হয়েছে ‘গোল্ডসেন্ড অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড’ নামে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে এই কোম্পানি তাদের পূর্বের কর্মকাণ্ড আড়াল করে নতুন নাম দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপনে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে।

এরা পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কলাতলীতে বে স্যান্ডস, হিমছড়িতে বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস, বে হিলস, কুয়াকাটায় বে ব্রিজ ছাড়াও পদ্মার পাড়ে জাজিরা পয়েন্টে দ্য গ্র্যান্ড পদ্মা রিসোর্ট নামে কথিত পাঁচ তারকা মানের হোটেলে সুইট (কক্ষ) বিক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে করে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন অসংখ্য গ্রাহক।

জানা যায়, এই কোম্পানির মালিক বহু মামলার আসামি এবং বিতর্কিত গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ওরফে বাকের ও তার ছেলে মো. বেলাল হোসেন গ্রীন ডেল্টা ও গোল্ড স্যান্ডস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

গ্রীন ডেল্টার প্রতারিত একজন গ্রাহক জানান, নতুন করে প্রতারণার জন্য গোল্ডস্যান্ড গ্রুপ নাম দিয়ে নতুন কোম্পানি খুলে শুরু করেছে তাদের পুরোনো প্রতারণার ব্যবসা। বাহারি নামের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিনিয়োগের নাম করে মানুষদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের শেষ সম্বল। আমরা সাধারণ মানুষরা বিভিন্ন মিডিয়ার কল্যাণে গ্রীন ডেল্টার প্রতারণার কথা জানতে পেরেছিলাম এবং কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিল আর মালিকপক্ষরা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল।

হঠাৎ নতুন মোড়কে একই ব্যক্তিরা বিগত কয়েক বছর ধরে সেই পুরোনো কৌশল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে, যা অনেকেরই অজানা। মালিকপক্ষ বেলাল হোসেন, দিলদার হোসেন, আমির হোসেন স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বায়না চুক্তিতে জমি নিয়ে লোভনীয় বিভিন্ন প্রকল্পের সাইনবোর্ড টানায়। এরপর তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট বা সুইট রুম দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গোল্ডস্যান্ডস গ্রুপ শুরু করে বাহারি প্রচারণা। স্বপ্নের পর্যটন নগরীতে একটু মুনাফার আশায় গ্রাহকরা এখানে বিনিয়োগ করে গ্রীন ডেল্টার মতো প্রতারিত হচ্ছে।

এরা কারা?

গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড নামে একটি আবাসন কোম্পানি তৈরি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পলাতক ছিল এই বেলাল হোসেন সিন্ডিকেট। তাদের প্রতারণা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শত শত গ্রাহক রাস্তায় নেমে মানববন্ধন, অফিস ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে টাকা ফেরত চেয়ে মামলা করেছিল প্রতিষ্ঠানটির মালিক নূরুল আমিন, বেলাল হোসেন, দিলদার হোসেনসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে।

প্রতারিত গ্রাহকরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজউকে কয়েক ডজন অভিযোগ দেয়। এত কিছুর পরেও পুনরায় নিজের পরিচয় গোপন রেখে নয়া প্রতারণার কৌশল হিসাবে গোল্ড স্যান্ডস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে তারা। এরা এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নতুন করে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে।

গত কয়েকটি আবাসন মেলায় তারা অংশ নেওয়ার পর নতুন পরিচয়ে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়। রাজধানীর কয়েকটি থানায় প্রতারক গ্রীন ডেল্টা ও গোল্ড স্যান্ডস’র মালিক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। শত শত গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন একটি বাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা।

কাফরুল থানায় প্রতারিত গ্রাহক নাসির উদ্দিনের দায়ের করা মামলার এজাহারে দেখা যায়, নুরুল আমিন ওরফে বাকের, মো. বেলাল হোসেন, মো. দিলদার হোসেন, মো. আমির হোসেন, সানজিদা আক্তার স্মৃতি, উম্মে কুলসুম, শিমুল চৌধুরী এবং এস এম মোরশেদকে আসামি করা হয়েছে। এরা সবাই গ্রীন ডেল্টা ও নবগঠিত গোল্ড স্যান্ডস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের মালিক-কর্মকর্তা।

গ্রীন ডেল্টার প্রতারিত গ্রাহক তাফাজ্জল হোসেন ফরহাদ বলেন, তাদের একটি প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনে দেখি এটি আরও ৬ জনের কাছে বিক্রি করেছে। এ ব্যাপারে বহুবার যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। পরে কোম্পানিটি তাদের ধানমণ্ডির করপোরেট অফিস বন্ধ করে দিয়ে উধাও হয়ে যায়।

প্রতারিত গ্রাহক আরও জানান, কোম্পানির প্রতারক মালিক-কর্মকর্তারা গা-ঢাকা দেওয়ার পর তারা জানতে পারেন, শুধু তাদের এই প্রকল্পটিই নয়, প্রায় শতাধিক আবাসন প্রকল্পের নামে শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে ওই প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।

প্রায় ৬ বছর বিভিন্নভাবে দেন-দনবার করে তাদের উত্তরা প্রজেক্টে আরও নিু দামের ফ্ল্যাট নিয়ে চুপ থাকতে হয়েছে। ফ্ল্যাট নিলাম গুলশানে আর পেলাম উত্তরাতে তাও কত যুদ্ধ করে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, এরপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এসব প্রতারক। অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে বারবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম