ডেমরায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কাশফুলের শুভ্র সমারোহ
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় কাশফুলের শুভ্র সমারোহ মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শরৎ-প্রকৃতিতে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, আকাশের সাদা মেঘ যেন নেমে এসেছে ডেমরার বুকে। মৃদুমন্দ বাতাসে কাশফুলগুলো যেন একে অপরের গায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে, নাচছে আপন ছন্দে। অপরূপ এ শুভ্র সমারোহ দেখে কে না মুগ্ধ হবে! প্রকৃতির এ সৌন্দর্য যেন দোলা দিয়ে যায় সব বয়সিদের হৃদয়ে। তাই যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে ক্ষণিক প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটে আসে ডেমরায় কাশফুলের সংস্পর্শ পেতে। ঋতুরানি শরতের এ কাশবন নগরবাসীর যান্ত্রিক জীবনে দেয় খানিক মানসিক প্রশান্তি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ডেমরা থানার ৬৩, ৬৪ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিন মডেল টাউন, কোনাপাড়া মিনি কক্সবাজারখ্যাত এলাকা ও আমুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রতিবছরই দেখা মেলে কাশফুলের। ডেমরার বিভিন্ন খোলা জায়গায় চলে কাশফুলের নাচানাচি। তবে ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মেন্দিপুর, তাম্বুরাবাদ, ঠুলঠুলিয়া ও নলছাটা এবং ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুনদ তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কাশফুল দেখা যায়। কার্তিকের শেষের দিকেও এখানে চোখে পড়ে হৃদয় শান্ত করা কাশফুল। ডেমরার বিভিন্ন এলাকার কাশবন ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। এসেছেন নবদম্পতিরাও। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়েও এসেছেন অনেকে। এসেছেন বন্ধুবান্ধব মিলে। প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় অনেকেই এখানে থামছেন। কাশবনে নেমে উপভোগ করছেন কাশফুলের সৌন্দর্য। কাশবনে আবার কেউ বসে গল্প করছেন। কেউ বা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। নিজেদের মিলিয়ে দিচ্ছেন কাশফুলপ্রেমীরা। অনেকেরই হৃদয়ের কোণ থেকে হয়তো গেয়ে ওঠেন, ‘ঘাসফুল কাশবনে একা আনমনে, আঁকা ছবিগুলো।’ লোকসমাগমের কারণে এখানে বেশ কিছু হালকা খাবার, ফুচকা ও চটপটির দোকান গড়ে উঠেছে। ঘুরতে এসে অনেকেই এসব দোকানেও সময় কাটিয়ে যান। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল ও শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রিন মডেল টাউন এলাকায় কাশফুল দেখতে এসেছেন নীলিমা, সারা, সজীব ও হায়দার। স্ত্রী ও ছোট ভাইবোনকে নিয়ে কাশবনে ঘুরতে আসা হায়দার যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছরই ডেমরায় কাশবনে ঘুরতে আসি। এবার নতুন বউকে নিয়ে এসেছি। কোলাহলের মাঝে এখানকার কাশফুল কিছুটা হলেও আমাদের নির্মল আনন্দ দেয়।
ডেমরার রাজাখালী গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, আমার গ্রামের পাশেই প্রতিবছর কাশফুল দেখা যায়, এতে আমরা অভিভূত। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ভাগিনা-ভাগিনি ও আমার শিশুকন্যাকে নিয়ে কাশবনে আসি। ওরা খুব আনন্দ পায়। এলাকাবাসী জানান, ডেমরায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিনোদন বা ভ্রমণের স্পট নেই। বর্তমানে মিনি কক্সবাজারসহ কয়েকটি স্পট হয়েছে ছোট পরিসরে। তবে সর্বত্রই যেন ইট-পাথরের জীবন। এদিকে ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কোলঘেঁষে বয়ে চলা বালুনদ ও তীরবর্তী কাশবনসহ কয়েকটি এলাকায় এখনো প্রকৃতির ছোঁয়া মেলে। পরিকল্পিতভাবে এসব এলাকা সাজানো গেলে মনোরম পরিবেশে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রয়োজন। ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আমুলিয়া মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমাদের নিজস্ব এসব জায়গায় প্রতিবছর শরতে কাশফুল ফোটে বলে এখনো কোনো কাজ করি না। কাশবনে মানুষের প্রশান্তির সঙ্গে নিজেরাও প্রশান্তি অনুভব করি। ডেমরায় পরিকল্পিতভাবে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান এ ওয়ার্ড কাউন্সিলর।