সোনাগাজীর চরে বিষক্রিয়ায় পাঁচশর বেশি ভেড়ার মৃত্যু
জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) দক্ষিণ
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফেনীর সোনাগাজীর চরাঞ্চলে ভূমিদস্যুদের কালো থাবার বিষক্রিয়ায় পাঁচ শতাধিক ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি খাস ও বন বিভাগের চর আবদুল্লাহ বিটের প্রায় বিশ হাজার একর চারণভূমি জবরদখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বন বিভাগ দশটির বেশি মামলা করেও ভূমিগুলো উদ্ধার করতে পারেনি। জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খাস জমিগুলো উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই। এ সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসন যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।
সিন্ডিকেটের লোকজন জবরদখল করা এসব সরকারি ভূমির পুকুরে নির্বিঘ্নে মাছ চাষ করছেন। আর এসব পুকুরের দূষিত ও বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে ভেড়ার পাল। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হলেও খামারিরা ভয়ে তা করতে পারছেন না। গত এক সপ্তাহে উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব চরচান্দিয়া ও চর আবদুল্লাহ এলাকায় ১০ খামারির পাঁচশর বেশি ভেড়া মারা গেছে। হঠাৎ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে খাবার ও পানি খেয়ে ভেড়া মারা যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। একই সঙ্গে মৎস্য খামার ও নানা কারণে ঘাস কমে যাওয়াসহ চারণভূমি ছোট হয়ে আসায় গোখাদ্য নিয়ে নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এখানে বিভিন্ন চরাঞ্চলে শতাধিক ভেড়ার খামারি রয়েছেন। একেক খামারির একশ থেকে এক হাজারেরও বেশি ভেড়া রয়েছে। ভেড়া মারা যাওয়ার ঘটনায় খামারিরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা বিষয়টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেবু লাল দাসকে জানান। তিনি সরেজমিন ভেড়াগুলোকে পরীক্ষা করে মারা যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। পরে একটি মৃত ভেড়া ফেনীর আঞ্চলিক পশু হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। এতে দেখা যায় ভেড়াগুলো খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার খামারি নাজমুল হাসান বলেন, তার খামারে প্রায় চারশর বেশি ভেড়া রয়েছে। চরের একটি মৎস্য খামারের পানি খেয়ে ভেড়াগুলো হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক সপ্তাহে তার খামারের প্রায় ২০০ ভেড়া মারা গেছে।
এছাড়া একই এলাকার খামারি ফকির আহম্মদের ৯০টি, মো. হানিফের ৮৫টি, আবুল কাশেমের ৪৫টি, মো. রফিকের ৫০টি, হেদায়েত উল্যাহর ৫টি, মোবারক হোসেনের ৮টি, ওয়াজি উল্যাহর ৮টি, মো. নোমানের ৬টি, আবুল হাসেমের ৭টিসহ ১০ খামারির ভেড়া বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। খামারি বলেন, ওই এলাকায় অন্তত ১০-১২ খামারের ভেড়ার সঙ্গে তার ভেড়াগুলোও চরে একসঙ্গে ঘাস খায়। যে মৎস্য খামারের পানি খেয়ে ভেড়া মারা গেছে সেটি সরকারি জমি দখল করে স্থানীয় মো. লিটন, ফরিদ হোসেন, আবুল হাসেম ও হক সাহাব নামে চারজন গড়ে তুলেছেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফকির আহম্মদ বলেন, তাদের ধারণা, অবৈধ দখলদাররা পানিতে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। এতে পানি খাওয়ার পর ভেড়াগুলো মারা যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেবু লাল দাস বলেন, আপাতত সুস্থ ও অসুস্থ ভেড়াগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে কয়েক দিন খামারে রেখে পরিচর্যা এবং খাবার খাওয়াতে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হবয়েছে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বন বিভাগের ভূমি উদ্ধারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে করা মামলায় ইতোমধ্যে আসামিদের কেউ কারাগারে আছেন, কেউ জামিনে আছেন। এর আগে ভূমিদস্যুদের হাতে বন বিভাগের লোকজন একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, সরকারি খাসজমি উদ্ধারে শিগগিরই সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।