Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রংপুরের ৮ জেলার মৃত্যুফাঁদ ২ শতাধিক লেভেলক্রসিং

এক বছরে ৫৬ জনের মৃত্যু

Icon

মাহবুব রহমান, রংপুর

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুরের ৮ জেলার মৃত্যুফাঁদ ২ শতাধিক লেভেলক্রসিং

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে রংপুর প্রশাসনিক বিভাগের আট জেলার লেভেলক্রসিংগুলো এখন যানবাহন ও পথচারী পারাপারের ক্ষেত্রে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টি অবৈধ লেভেলক্রসিংসহ ২০০টি অরক্ষিত অবস্থায় মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব লেভেলক্রসিংয়ে যানবাহন ও পথযাত্রী পরাপার হতে গিয়ে এক বছরে দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রশাসনের সঙ্গে রেলওয়ের সমন্বয়হীনতা, জনবল সংকট ও পথনির্দেশনা না মানার প্রবণতার কারণে এসব লেভেলক্রসিংয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

১৯০০ সালের শুরুতে দেশে রেল যোগাযোগ চালুর সময় থেকেই রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের মধ্যে ৩৯১টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এরপর আরও ১০৭টি লেভেলক্রসিং স্থাপন করা হলেও তা রেলওয়েকে জানানো হয়নি। কালের বিবর্তনে স্থানীয়দের চাহিদা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রশাসনিক কাঠামোর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা কারণে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসন যখন যার প্রয়োজন, তারা নিজের মতো করে রেলপথ অতিক্রম করতে সড়ক স্থাপন বা সড়ক সংযোগ করার সময় অরক্ষিত লেভেলক্রসিং নিয়ে ভাবেননি। এখন যানবাহন ও পথচারী পারাপার বেড়ে যাওয়ায় এসব এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। লেভেলক্রসিং দিয়ে যানবাহন ও পথযাত্রী পরাপার করতে গিয়ে এক বছরে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৩০ জনের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে ৪৯২টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে রেলওয়ে ট্রাফিক অ্যান্ড সিগন্যালের ১১৬ ও রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের রয়েছে ৩৭৬টি। এগুলোর অধিকাংশই অরক্ষিত এবং অবৈধ। ওইসব লেভেলক্রসিংয়ের কোথাও কোথাও সাবধান সাইবোর্ড লাগিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রংপুর নগরীর পাটবাড়ি, বালাটারি, কলাবাড়ি, পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী উপাশু, কাউনিয়া উপজেলার থানা লেভেলক্রসিং, তকিপল হাট রেলগেট, খোর্দ্দ বালাপাড়া লেভেলক্রসিং, খোপাতী ও তপসীডাঙ্গা লেভেলক্রসিং, পাঞ্জরভাঙ্গা লেভেলক্রসিং, শহীদবাগ লেভেলক্রসিং, বুদ্ধির বাজার বাঁধের রাস্তা লেভেলক্রসিং, মহেশা রেলঘুণ্টি, মৌল লেভেলক্রসিং, বল্লভবিষু লেভেলক্রসিং, সাধু স্কুল মোড়, বিজলেরঘণ্টি, কলাবাড়ি, পীরগাছার কুটিরপাড়, অন্নানগরসহ রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি লেবেলক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে। এসব লেভেলক্রসিংয়ের রাস্তা দিয়ে দিন-রাত যানবাহন, মানুষ ও গবাদিপশু চলাচল করলেও নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো পাহারাদার বা গেটম্যান। তাই হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি। এভাবে অরক্ষিত এসব লেভেলক্রসিং এখন পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। অথচ এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একেবারেই নীরব। তবে হুঁইশেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন। এর কারণে পথচারীরা সবসময় আতঙ্কে থাকেন।

কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশনমাস্টার হোসেন মোবারক জানান, তকিপল বাজার রেলগেটে একজন গেটম্যান রয়েছেন। ওই গেটম্যান সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত রেলগেটটি অরক্ষিত থাকে। তিনি আরও জানান, দেশের প্রতিটি রেলগেট নিয়ন্ত্রণ করে রেলের দুটি শাথা, একটি হচ্ছে ট্রাফিক শাখা আরেকটি হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা। গেটম্যান দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। তার পরেও চেষ্টা চলছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, অপরিকল্পিতভাবে রেল বিভাগকে না জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনগুলো যখন যার প্রয়োজন তারা তাদের মতো রেলপথ অতিক্রম করে সড়ক সংযোগ স্থাপন করেছে। কিন্তু এসব লেভেলক্রসিং এখন উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোতেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রেল বিভাগের সমন্বয়হীনতা, জনবল সংকট, অপরিকল্পিত লেভেলক্রসিং স্থাপন, পথনির্দেশনা না মানার প্রবণতার কারণে প্রতি মাসেই লেভেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। তবে, তাদের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ জড়িপ করা হচ্ছে কতগুলো লেভেলক্রসিং আছে এর মধ্যে কতটি বৈধ আর কতটি অবৈধ তা চিহ্নিত করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম