দিনে ঘটল দুর্ঘটনা রাতে সওজ টানাল সতর্ক সাইনবোর্ড
সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে আঞ্চলিক মহাসড়কে বেইলি সেতু ভেঙে দুই পরিবহণ শ্রমিক মারা যাওয়ার পর রাতের আঁধারে ‘সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড’ সাঁটিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সড়ক বিভাগ।
এদিকে নিহত ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে মামলা করে নতুন সমালোচনার সৃষ্টি করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নিজেদের দায় এড়িয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী বলছেন, নিহত ট্রাকচালক ও হেলপারের পরিবারের কান্না এখনো থামছে না। অথচ চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যা খুবই অমানবিক।
মঙ্গলবার রাতে জগন্নাথপুর বাজারের ফাতেমা ট্রেডার্সের মালিক শাকিল আহমদ ও নিহত ট্রাকচালক ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির মামলা করেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। এ ঘটনায় জগন্নাথপুরবাসীর মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। মঙ্গলবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক জগন্নাথপুরে আসার পথে বিকালের দিকে কাটাগাঙের ওপর উঠামাত্র ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে যায় ট্রাক। এতে ট্রাকের চালক ও হেলপার নিহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদী থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। এ দুর্ঘটনার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর। তবে ঘটনার পর সড়ক বিভাগের টনক নড়ে। বিকালের দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. ফজলে রাব্বি ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম প্রামাণিক। স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ও ফেসবুকে লেখালেখি হলে ঘটনার দিন গভীর রাতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেতুর সামনে ধীরে চলুন, সামনে গতিরোধক ও ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, মালামালসহ ১০ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ-এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সংবলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই সেতুর একই স্থানে আগে থেকে সাইনবোর্ড ছিল, কিন্তু কে বা কারা খুলে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কে নলজুর নদীর শাখা কাটা গাংয়ের ওপর বেইলি সেতুটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে জরাজীর্ণ সেতুটির পাটাতন খুলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একাধিকার সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আঁচ করতে পেরে স্থানীয় জনসাধারণ দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি সংস্কারের দাবি তুলেন। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসীনতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ জুলাই এই সেতুর পূর্ব পাড়ে চারটি পাটাতনের জোড়া খুলে ফাঁক হয়ে যায়। এছাড়া একটি পাটাতন আরেকটির ওপর উঠে গেলে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকার পর কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে কাজ করে। ব্যস্ততম এই সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে এর আগেও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে।
সুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানিয়েছেন, কাটাগাঙের ওপর ক্ষতিগ্রস্ত ওই বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন সুনামগঞ্জের জনসাধারণ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম প্রামাণিক যুগান্তরকে জানান, শিগ্গির ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর মেরামত কাজ শুরু হবে।
তিনি জানান, আগে ব্রিজের উভয় পাশে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগানো ছিল। কিন্তু কে বা কারা সাইনবোর্ড নিয়ে গেছে।