Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সাজা আতঙ্কে বিএনপি নেতারা

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাজা আতঙ্কে বিএনপি নেতারা

নতুন মামলা দায়েরের পাশাপাশি পুরোনো বেশ কিছু মামলার বিচার শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা। সাজার আতঙ্কে আছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মামলার জালে আটকানোর চেষ্টা চলছে সক্রিয় নেতাকর্মীদের। আন্দোলন নস্যাৎ করে একতরফা নির্বাচনের পথ তৈরি করতে সরকার এই কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপি সূত্র জানায়, নাশকতা, ভাঙচুর, হামলা ও বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন আইনে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে চার্জ গঠন শেষে বিচার শুরু হয়েছে। আরও কিছু মামলা চার্জ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নগর বিএনপির সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বায়েজিদ থানায় দায়ের হওয়া ২০১৮ সালের একটি মামলায় গত ১৭ আগস্ট বিএনপি ও জামায়াতের ৪৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা এ মামলার আসামিদের মধ্যে আমার নামও রয়েছে। তাই চার্জ গঠনের দিন আদালতে হাজির হতে হয়েছিল। এর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার একই থানার আরও একটি মামলার চার্জ গঠনের শুনানি ছিল অপর একটি আদালতে। এই মামলায়ও আমি আসামি এবং আগের মামলার মতোই আদালতে উপস্থিত হতে হয়েছে।

ইদ্রিস আলী বলেন, আন্দোলন জোরদার হওয়ার মুহূর্তে দ্রুত রাজনৈতিক মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দিচ্ছে। এতে সহজেই অনুমান করা যায়, আন্দোলন দমাতেই করা হচ্ছে এসব।

তিনি বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ সিনিয়র নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে দায়ের কয়েকটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তবে ঠিক কতটি রাজনৈতিক মামলার বিচার চলছে তার সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

নগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে ৫ হাজার ৬৪২টি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ১৪ জনকে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৯৪৩টি মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৫৫ জন। অন্যদিকে একই সময়ে মহানগরীতে ৩ হাজার ৬৯৯টি মামলায় আসামি করা হয় ১ লাখ ৫৫৯ জনকে। সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশ কিছু নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকের নামেই মামলা রয়েছে। মামলা আছে কর্মীদের নামেও। নাশকতা, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা হলেও বিএনপির দৃষ্টিতে সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮৮টি মামলা। সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নামে আছে ৬৬টি। দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নামে মামলার সংখ্যা ৪১টি। নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহর নামে ১৩৭টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা রয়েছে। এছাড়া দলের মধ্যম সারির নেতাদের নামে ৮-১০টি করে মামলা আছে। পুরোনো মামলাগুলোতে বেশিরভাগ নেতাকর্মীই জামিনে রয়েছেন। জামিনে থেকেই তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রায় ৯০টির মতো গায়েবি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০-১২টি বিচারাধীন। নেতাকর্মীদের নামে দায়ের মামলার সবগুলোই মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যথাযথ সাক্ষী নেই। কিছু সাজানো সাক্ষী হাজিরের চেষ্টা হয়তো করা হবে। দেশের মানুষ জানে এসব মামলার ভিত্তি কতটুকু। যদি এমন সব গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদের সাজা হয় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। আমরা আদালতকে শ্রদ্ধা করি। বিচার বিভাগের ওপর থেকে যেন মানুষ আস্থা না হারায়, সেটা চাই আমরা। মামলা দিয়ে বিএনপির আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। নেতাকর্মীরা এখন আর মামলা-হামলাকে ভয় করে না।

নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, তার বিরুদ্ধে ১৩৭টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি বিচারাধীন। দু-এক মাসের মধ্যে একাধিক মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।

তিনি বলেন, অবস্থা এমন হয়েছে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বইখাতা নিয়ে যায় স্কুলে, চাকরিজীবীরা যায় অফিসে, আর আমি ফাইলপত্র নিয়ে প্রতিদিন যাই আদালতে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম