Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

পরিকল্পনায় গলদসহ পাঁচ কারণে মিলছে না সুফল

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরিকল্পনায় গলদসহ পাঁচ কারণে মিলছে না সুফল

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি বড় প্রকল্প। এর মধ্যে প্রধান প্রকল্পের কাজ তিন চতুর্থাংশ শেষ হয়েছে। তবু হয়নি সমস্যার সমাধান। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবছে নগরী। গত চার দিন অনেকটা পানিবন্দি নিচু এলাকার লোকজন। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনায় গলদসহ অন্তত পাঁচটি কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অন্য কারণগুলোর মধ্যে আছে ১৯৯৫ সালে প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা তৈরি না হওয়া, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং বর্জ্য ব্যবস্থানা গড়ে না ওঠা। চট্টগ্রামের দুই নগর পরিকল্পনাবিদ পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও স্থপতি আশিক ইমরান এসব কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি, সিটি করপোরেশনের একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প চলমান। পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএর মেগা প্রকল্পটির কাজ এরই মধ্যে ৭৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র অন্য একটি প্রকল্প এবং এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজও চলছে। তবে এক হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি করপোরেশনের বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোর কাজ এখনো শুরু হয়নি।

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য বড় বড় যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার সুফল পাওয়া খুব কঠিন। কারণ এগুলোর বেসিক জায়গাতেই সমস্যা। যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, আমি যদি পরিকল্পনার দিক থেকে বলি-এগুলোর প্ল্যানিং, ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজাইন কি কোনো থার্ড পার্টি দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে? আমার জানা মতে হয়নি। কেউ জানে না কোথায় কত মাটি কাটতে হবে, হয়তো এ বিষয়ে প্রকল্পে কিছুটা নির্দেশনা আছে কিন্তু সেটাই ঠিক হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা বলছেন-তারা বেশ কিছু খাল খনন করেছেন, পরিষ্কার করেছেন। প্রশ্ন জাগে, তাহলে ওই খালগুলো দিয়েও পানি সরছে না কেন? তার মানে কোথাও কিছু একটা গলদ আছে। এ গলদ কিন্তু যাচাই করা হয়নি। নিয়ম হলো কোনো একটা প্রকল্প হলে সেখানে ডাটাভিত্তিক কাজ করতে হবে। বিদ্যমান খালগুলো যেভাবে সংস্কার করা হচ্ছে, সেগুলো নগরীর পানি নিষ্কাশন করতে সক্ষম কিনা, এরকম কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।

হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলার পরও জলাবদ্ধতা হওয়ার যে উপাদানগুলো আছে, তার সবই এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে তা চিন্তা করা হচ্ছে না। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। সরকারের এক সংস্থা শুধু অন্য সংস্থার ওপর দোষ চাপাচ্ছে। কোনো সমন্বয় নেই। কোনো সংস্থা এগুলোর দায়িত্ব নেয়নি। তাই খাল-নালা সহজেই ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে।

অন্যদিকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা প্রকল্পের জন্য আরও গভীর সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি অনেকটাই তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয়েছিল। হয়তো এ কারণে প্রকল্পের যে ডিটেইল সমীক্ষার দরকার ছিল তা হয়নি। ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যে সমন্বয় করার দরকার ছিল তাও হয়নি। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। এর পরও আমি বলব কাঙ্ক্ষিত সুফল না পেলেও প্রকল্পের সফলতা আছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটির এখনো ২৫ শতাংশ বাকি। এর পুরোটাই নিচের দিকে, অর্থাৎ যে অংশ দিয়ে পানি নির্গমণ হবে। নিচের দিকের কাজ শেষ না হওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। এ কাজটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন। এখানে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় রয়েছে। তাই বাকি কাজ শেষ হলে সব সিস্টেম একসঙ্গে কাজ শুরু করলে সুফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়।

১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে এত সমস্যা হয়তো থাকত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাস্টার প্ল্যানের কাজ একেবারেই হয়নি। তখন আমাদের আর্থিক সক্ষমতাও তেমন ছিল না। এ কারণে চট্টগ্রামের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ওই মাস্টারপ্ল্যানে বারইপাড়া খাল খননের কথা বলা হয়েছে। এটা করতে হবে। কারণ এখন আর শুধু চাকতাই খাল নগরীর পানির চাপ নিতে পারছে না। এছাড়া খালের বর্জ্য অপসারণ নিয়ে সিটি করপোরেশন ও সিডিএর মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্ব আছে তার নিরসনও হতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম