স্টোর থেকে কোটি টাকার কাঁচামাল গায়েব
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেডের স্টোর থেকে তার তৈরির কোটি টাকা মূল্যের কাঁচামাল (কপার টেপ) গায়েব হয়েছে। ২ হাজার ১০৫ কেজি কেজি ওজনের এই কপার টেপ গায়েবের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে তোলপাড় চলছে। বিষয়টি তদন্ত করতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন-বিএসইসি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
ইস্টার্ন কেবলস সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুনের প্রথম সপ্তাহের দিকে কপার টেপ গায়েবের ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে ইস্টার্ন কেবলসে ব্যবস্থাপনা কমিটি ছাড়া সবার কাছ থেকে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানান। এ নিয়ে ১৯ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের আগে যে ইনভেন্টরি করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান থেকে তিন ধরনের কপার টেপ গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। স্টোর লেজার অনুযায়ী ১০ মি.মি বাই শূন্য দশমিক ১ মি.মি কপার টেপ ১ হাজার ৪৯ কেজি থাকার কথা। কিন্তু এক ছটাক কপার টেপও পাওয়া যায়নি। পুরোটাই গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে স্টোর লেজার অনুযায়ী ১৫ মি.মি বাই শূন্য দশমিক ১ মি.মি কপার টেপ মজুত থাকার কথা ১ হাজার কেজি। কিন্তু এ সাইজেরও কোনো কপার টেপ স্টোরে অবশিষ্ট নেই। আবার স্টোরের লেজার অনুযায়ী ৩০ মি.মি বাই শূন্য দশমিক ১ মি.মি কপার টেপ থাকার কথা ১ হাজার ৫৬ কেজি। কিন্তু স্টোরে পাওয়া গেছে ১ হাজার কেজি। অর্থাৎ ৫৬ কেজি কপার টেপ উধাও হয়েছে। তবে ২০ মি.মি বাই শূন্য দশমিক মি.মি সাইজের কপার স্টোর লেজার অনুযায়ী (৯৬০ কেজি) পাওয়া গেছে।
কপার টেপ গায়েবের ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিএসইসি’র যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (বাণিজ্য) হায়দার জাহান। অন্য সদস্যরা হলেন-জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (জিইএম) কোম্পানি লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম অডিট জোনের (নিরীক্ষা বিভাগ) উপ-প্রধান নিরীক্ষণ কর্মকর্তা অলক প্রিয় বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম ইস্টার্ন কেবলসের উপ-প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সঞ্চয় কুমার দত্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইস্টার্ন কেবলসের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনভাবে আমদানি করা মূল্যবান কপার টেপ গায়েব হতে পারে। প্রথমত, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মালামাল না দিয়ে বক্স ধরিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমদানির পর মালামাল বুঝিয়ে না দিয়ে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছে। তৃতীয়ত, স্টোর রুম থেকে কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে এসব কপার টেপ বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইস্টার্ন কেবলসের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, ‘কপার গায়েবের বিষয়টি আমরাও (কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা) জানতাম না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইস্টার্ন কেবলসে আসলে আমরা জানতে পারি। যতটুকু জানি এখনও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। গায়েব হওয়া কপার টেপের মূল্য কোটি টাকার ওপরে হবে বলেও জেনেছি।’ ইর্স্টান কেবলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ সাহেরুল আজম জানান, কপার টেপ গায়েবের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং জিইএম কোম্পানি লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।