Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ঢাকায় বাড়ছে মৌসুমি অপরাধীদের দৌরাত্ম্য

টার্গেট টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, চলতি পথ, মার্কেট ও গরুর হাট * বেশি তৎপর অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী চক্র

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় বাড়ছে মৌসুমি অপরাধীদের দৌরাত্ম্য

ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীতে মৌসুমি অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ঈদ এলেই এরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের ভয়ংকর তৎপরতা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, চলতি পথ, মার্কেট-বাজার ও গরুর হাট টার্গেট করে তারা নানা ধরনের অপরাধ করে। অপরাধী চক্রের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান পার্টি, পকেটমার, ছিনতাইকারী এবং জাল টাকার কারবারি। এরা কখনো অচেতন করে, আবার কখনো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়। এবারও তারা নানা কৌশলে একের পর এক অপরাধ করে চলেছে।

মঙ্গলবার ভোরে মিরপুর-১৪ নম্বরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন পাঠাও চালক সুরুজ আলী (৪০)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে রাতে তিনি মারা যান। ওই রাতেই কল্যাণপুরের সোহরাব ফিলিং স্টেশনের সামনের রাস্তায় জাবের উদ্দিন নামে এক ভ্যানচালকের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, তিনি ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এর আগে সোমবার আসমানি পরিবহণের একটি বাসে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছিলেন রহিমা বেগম ও তার মেয়ে। আজমপুরের কাছে যানজটে থেমে থাকা বাসটির জানালার ফাঁক দিয়ে রহিমা বেগমের কান ছিঁড়ে দুল নিয়ে যায় এক ছিনতাইকারী। ভুক্তভোগীরা জানান, এই রুটে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিয়ে সদরঘাট থেকে লঞ্চে ভোলায় ফিরছিলেন রিফাত (২৮)। সেখানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় ১৭ জুন সন্ধ্যায় তাকে লঞ্চ থেকে মুন্সীগঞ্জ ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিন ধানমন্ডি ৬ নম্বর রোড এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে নিজের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হারান মো. আলম নামের এক ব্যক্তি। এর আগে ১২ জুন ঢাকায় আজমেরি পরিবহণের একটি বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন নওগাঁর হাবিবুর রহমান। অচেতন করে তার কাছে থাকা ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এসব অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়িয়েছে। ১৩ জুন র‌্যাব-৪ এর একটি দল গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল মান্নান, হাবিবুল্লাহ ও রেজাউল করিম নামে অজ্ঞান পার্টির ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক আব্দুর রহমান বলেন, এরা যাত্রীর ছদ্মবেশে দূরপাল্লার বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে। এরপর কৌশলে চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার কিংবা পানীয় খাইয়ে অজ্ঞান করে যাত্রীর সবকিছু লুটে নিয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এবারের ঈদে নিরাপত্তায় ভিন্নধর্মী কৌশল নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে প্রযুক্তির পাশাপাশি পুলিশ ছদ্মবেশে তৎপর রয়েছে। অর্ধশতাধিক পয়েন্টকে ক্রাইম হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আরেক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা অজ্ঞান ও মলম পার্টি। তারা বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি গরুর হাটগুলোতে ঢুকে। গরুর ব্যাপারী কিংবা ক্রেতাদের কৌশলে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে অর্থকড়ি লুটে নিয়ে যায়। এবার গরুর হাটগুলোতে অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা রোধে নানা কৌশল নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরাধ রোধের লক্ষ্যে গরুর হাট এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার হোটেলগুলোকেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে।

ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) বিজয় বিপ্লব তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, অন্য ঈদের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের কবল থেকে রেহাই পেতে নির্জন স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। আর অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে দূরে থাকতে হলে সচেতন থাকতে হবে। অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার এবং ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো খাবার বা পানীয় কিনে খাওয়া যাবে না।

অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আর ডিএমপি কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুক নগরবাসীকে স্বস্তির ঈদ উপহার দিতে পুলিশ সদস্যদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, দুই কোটি নগরবাসীর মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষ ঈদ উদ্যাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। তাদের বাসাবাড়ির নিরাপত্তা এবং ফাঁকা রাস্তায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অপরাধীদের ওপর নজরদারি আগের চেয়ে আরও বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে গত ২ মাসে ছিনতাই অনেকটা কমে এসেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম