Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ফরিদপুরের কুমার নদ খননের উদ্দেশ্য ব্যর্থ

Icon

জাহিদ রিপন, ফরিদপুর

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফরিদপুরের কুমার নদ খননের উদ্দেশ্য ব্যর্থ

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে না পারায় ফরিদপুর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কুমার নদের খননকাজ সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদের দুপাড়ে ১ হাজার ৮৮৯ জন দখলদার চিহ্নিত হলেও উচ্ছেদ করা হয়েছে নামমাত্র কয়েকজনকে। এদিকে নাব্য ও স্রোতধারা না থাকায় কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে গেছে প্রায় পুরো নদ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যবসায়ী, সচেতনমহল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজ কচুরিপানা পরিষ্কারে নামবে। দখলদার উচ্ছেদ ও নদের নব্য ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।

সূত্র জানায়, কুমার নদ দখলমুক্ত করে নাব্য ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৮ সালে ২৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। চলতি ৩০ জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে নদে ১০ কোটি ঘনমিটার পানি প্রবাহ সৃষ্টি এবং ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দেওয়ার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যথাযথভাবে প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছে সচেতনমহল। তাদের দাবি, নদের দখল ও দূষণ তো কমেইনি বরং বর্জ্য ও কচুরিপানায় সয়লাব হয়েছে পুরো নদ। ফলে নদ খননের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন হয়নি।

ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মদনখালী এলাকায় পদ্মা নদী থেকে কুমার নদের উৎপত্তি। এটি ফরিদপুর শহরের মধ্য দিয়ে সালথা, নগরকান্দা, ভাঙ্গা উপজেলা হয়ে ১২১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার সেনদিয়া এলাকায় আড়িয়াল খাঁ ও মধুমতি নদীর সংযোগ খাল বিলরুট ক্যানেলে গিয়ে শেষ হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ২১ এপ্রিল কুমার নদ খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় উৎসমুখ মদনখালী এলাকার অন্তত ২০০ মিটার অংশে খনন করা যায়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা থেকে কুমার নদে পানি প্রবাহ থাকে না। পাউবো ২০২০ সালে নদের ফরিদপুর অংশে ১ হাজার ৮৮৯ জন দখলদার চিহ্নিত করে। ওই বছর পাউবো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে শহরের বিসর্জন ঘাট বস্তি এলাকার ৯টি ছাপড়া ঘরসহ নামেমাত্র কয়েকটি ঘর উচ্ছেদ করে অভিযান শেষ করে।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা নানা স্থাপনা অপসারণ করতে না পারায় নদ পুনঃখনন করা যায়নি। নদের পশ্চিম পাড়ে হাজি শরীয়তুল্লা বাজার, পূর্ব পাশে তিতুমীর বাজার, ময়ড়াপট্টিসহ নানা দোকানপাট রয়েছে। এসব দোকানপাট ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলা হচ্ছে। কচুরিপানায় পরিপূর্ণ আর ময়লার স্তূপ জমে নদ এখন মজা খালে পরিণত হয়েছে। পানি পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

জানা যায়, নদের উৎসমুখে মদনখালী এলাকার ২০০ মিটার অংশে দেড় থেকে দুই একর জমি রয়েছে। এ জমির মালিক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খলিফা কামালউদ্দিন এবং এলাকার বাসিন্দা পান্নু মিয়া। তাদের বিরোধিতার কারণে পদ্মার সঙ্গে কুমারের সংযোগ ঘটানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে খলিফা কামালউদ্দিন বলেন, জমি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সরকারি নিয়ম মেনে জমি অধিগ্রহণ করে নিতে হবে। যতটুকু জানি অধিগ্রহণের জন্য ১২ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না করে টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল ইসলাম বলেন, বাসাবাড়ি ও বাজারের বর্জ্য নদে না ফেলার জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরের নর্দমার মুখগুলোর বিকল্প পথ খুঁজে বের করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে আমাদের।

জানতে চাইলে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, নদের পাড়ে বিভিন্ন অবকাঠামো থাকায় শহরের মধ্যকার দুই কিলোমিটার পুনঃখনন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে নাব্য রয়েছে। কাটতে পারলে প্রশস্ততা বাড়ানো যেত। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, যখন উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন আমি ফরিদপুরে ছিলাম না। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বর্তমানে নদটি কচুরিপনায় পূর্ণ হয়ে আছে। শনিবার (আজ) কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম