৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি চায় পুলিশ সদর দপ্তর
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুলিশের উচ্চপর্যায়ের ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাডারের ১১৩ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর পুলিশের পদোন্নতির বিষয়টি নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এরপর পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রস্তাব এসএসবিতে (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, শূন্যপদ না থাকলেও সুপারনিউমারারি বা সংখ্যাতিরিক্ত পদোন্নতি দিয়ে ইনসিটু (পদোন্নতির পরও আগের পদে দায়িত্ব পালন) করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে পদোন্নতি দিয়ে যাদের ইনসিটু পদায়নের কথা বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫০ জনই অতিরিক্ত আইজি। তাদের মধ্যে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় ১৬ এবং গ্রেড-২ পদমর্যাদায় ৩৪ জন কর্মকর্তা। তাছাড়া ১৫৭ জন ডিআইজি, ২৬৬ জন অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৪৭ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন। প্রস্তাবটি পাশ হলে পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়জন অতিরিক্ত আইজিপিকে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় ইনসিটু পদায়ন করা হবে। একই পদমর্যাদায় সিআইডি, পুলিশ টেলিকম, হাইওয়ে, রেলওয়ে, পিবিআই, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, নৌপুলিশ, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও এপিবিএন-এ একজন করে কর্মকর্তার পদায়ন হবে। গ্রেড-২ পদমর্যাদায় অতিরিক্ত আইজি পদে পুলিশ সদর দপ্তরে ১৪, ডিএমপিতে পাঁচ, এসবিতে চার এবং পুলিশ টেলিকমে দুজন কর্মকর্তার পদায়ন হবে। এছাড়া চার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (টাঙ্গাইল, রংপুর, নোয়াখালী ও খুলনা), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং পুলিশ হাসপতালে একজন করে অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদায়ন পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) কামরুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতি এরপর ইনসিটু রাখার বিষয়ে এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি। প্রস্তাবটি আলোচনা পর্যায়ে আছে। মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনা শেষেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পেশাদারি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি, ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার পর্যাপ্ত পদ ও দক্ষ জনবল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশ বিভাগে তা অপ্রতুল। পদ না থাকার কারণে যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো ভারসাম্যহীন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনবল বেড়েছে। সে অনুযায়ী উচ্চপর্যায়ে পদ বাড়েনি। এ কারণে পদোন্নতির সব ধরনের যোগ্যতা অর্জন করলেও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নেতৃত্ব পর্যায়ে পুলিশের কর্মস্পৃহা, মনোবল, মর্যাদা, শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা বাড়াতে এ মুহূর্তে পদোন্নতি এবং প্রয়োজনে ইনসিটু পদায়নের বিকল্প নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবল ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪। এর মধ্যে একজন আইজি (সিনিয়র সচিব), অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) দুই, অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) ২০, ডিআইজি ৮৫, অতিরিক্ত ডিআইজি ২০০, এসপি ৫৯৩, অতিরিক্ত এসপি ১০০১, এএসপি ১২২২, পরিদর্শক ৬৮৯৮, এসআই ২৪ হাজার ৪২৯ এবং সার্জেন্ট ২ হাজার ১৬৪ জন। এছাড়া ১৮ হাজার ৭০১ জন এএসআই (নিরস্ত্র), ৭ হাজার ৬৭৭ জন এএসআই (সশস্ত্র), ২ হাজার ৪৭ জন এটিএসআই, ৭ হাজার ৭০০ নায়েক এবং ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২ জন কনস্টেবল আছেন। এর বাইরে পুলিশে সিভিল পদ আছে ১৯৯২টি। পুলিশে মোট ক্যাডার পদে (এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব) ৩ হাজার ১২৪ জন। মোট ননক্যাডার (কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত) ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন।
সদর দপ্তর আরও জানায়, পুলিশ প্রশাসন ৩০টি ইউনিটে বিভক্ত। এই ইউনিটগুলো হলো-পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, মেট্রোপলিটন পুলিশ (আটটি), জেলা পুলিশ (৬৪টি); আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৫টি); নৌপুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ রিজিয়ন (আটটি); শিল্পাঞ্চল পুলিশ রিজিয়ন (আটটি); পুলিশ টেলিকম, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি-চারটি); ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার (৩০টি); জোন (মেট্রো-৪৭টি); থানা (৬৬৪টি); ফাঁড়ি (৪৫৯টি); এসবি, র্যাব ব্যাটালিয়ন (১৫টি); রেঞ্জ পুলিশ (আটটি); রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ-সাতটি); স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন-দুটি); ট্যুরিস্ট পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ জেলা (সাতটি); পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অ্যান্টি টোরোরিজম ইউনিটি (এটিইউ), পুলিশ স্টাফ কলেজ, ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল (টিডিএস), পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সার্কেল (২৩৯টি); তদন্তকেন্দ্র ২১৫টি এবং ক্যাম্প ১৬৭টি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশ সদর দপ্তরে ৩২; এসবিতে ১২; পুলিশ টেলিকমে তিন; হাইওয়ে পুলিশে ৯; রেলওয়ে পুলিশে দুই; পিবিআইয়ে পাঁচ; শিল্পাঞ্চল পুলিশে তিন; নৌপুলিশে তিন; এটিইউতে ৯; ট্যুরিস্ট পুলিশ, সারাদা পুলিশ একাডেমি ও পুলিশ স্টাফ কলেজে চারজন করে; ডিএমপিতে ১৩; সিএমপি ও কেএমপিতে তিনজন করে; ১৫টি এপিবিএনে ১৫; এসপিবিএনে দুই; পিএসটিএস (রাঙামাটি) ও এএসটিসিতে (রাঙামাটি) একজন করে; আরআরএফ-এ সাত এবং সিআইডিতে ১৪ জন কর্মকর্তা ডিআইজি পদে ইনসিটু পদায়ন পাবেন। পুলিশ সদর দপ্তরে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পুলিশ সদর দপ্তরে ২৫; এসবিতে ৩০; সিআইডিতে ৪০; পুলিশ একাডেমি ও পুলিশ টেলিকমে চারজন করে; ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, পুলিশ স্টাফ কলেজ, সিএসমপি, বিএমপি, জিএমপি ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে পাঁচজন করে; শিল্পাঞ্চল পুলিশ, এপিবিএন সদর দপ্তর, এসপিবিএন, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট রেঞ্জে দুইজন করে; ঢাকা রেঞ্জ ও টিডিএস-এ তিনজন করে; নৌ পুলিশে ছয়জন; আরএমপি ও এটিইউতে ১০ জন করে; ডিএমপিতে ৪৫, সিএমপিতে ১৫; কেএমপিতে আট; ১৫টি এপিবিএন ব্যাটালিয়নে ১৫; আরআরএফ-এ সাত; রাঙামাটি এসটিএস ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একজন করে এবং ইনসার্ভিংস ট্রেনিং সেন্টারে ৩০ জন কর্মকর্তা ইনসিটু পদায়ন পেতে পারেন। এছাড়া যেসব ইউনিটের ইউনিটপ্রধান এসপি থেকে তদূর্ধ্ব, সেসব পদমর্যদার কর্মকর্তাদের (জেলা ছাড়া) অতিরিক্ত এসপি পদের বিপরীতে এসপি হিসাবে ইনসিটু পদায়নের পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।