আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত
সাইনবোর্ড-কাঁচপুর মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যান
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হাইকোর্ট ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দেশের সব প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে সারা দেশের ২২টি মহাসড়কে লেগুনা, থ্রি হুইলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটো, ইজিবাইক, টেম্পো এবং অযান্ত্রিক সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
কিন্তু আদালত ও সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে।
হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এ অংশে অবাধে চলছে অবৈধ এই বাহনগুলো। এর ফলে মহাসড়কে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঝরছে প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই। স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বলছেন, এ সব যান থেকে পুলিশের মাসিক আয় অর্ধকোটি টাকা।
সম্প্রতি সরেজমিন এ মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাহনগুলো। এসব অবৈধ যানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব যানের মালিকের সঙ্গে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের টিআই শরফুদ্দিনের মাসিক চুক্তি রয়েছে। টাকার বিনিময়ে তারা এ মহাসড়কে চলাচল করতে পারছেন।
অনেক সময় দেখা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন ও অদক্ষ চালকদের দ্বারা মহাসড়কে চালিত এসব যানবাহন বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে।
ফলে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম ঢালে উলটোপথে আসা এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৫ যাত্রী প্রাণ হারান।
মো. আবুল কালাম নামের শ্যামলী পরিবহণের এক চালক বলেন, এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে আমাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে সড়কে বাস চালাতে হয়। এসব যানবাহনের চালক কোনো নিয়ম মেনে চালায় না। অধিকাংশ সময় উলটো পথে চলাচল করে।
কাভার্ড ভ্যানচালক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ মহাসড়কে পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি অবৈধ লেগুনা এবং তিন চাকার বাহন চলাচল করে। এসব বাহনকে হর্ন দিলেও তারা সাইট দেয় না। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ হয় আমাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্টারগুলোর পরিবহণ মালিকদের কাছ থেকে হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) একেএম শরফুদ্দিন প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকেন।
দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রাকের মালিকদের কাছ থেকেও একই অংকের মাসোহারা আদায় করছেন টিআই শরফুদ্দিন। এছাড়া শিমরাইল মোড়ের সিএনজি চাঁদাবাজ মিঠুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, লেগুনা চাঁদাবাজ আতিকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকাসহ লোকাল বাস, ট্রাক, জেলা ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ আদায় করেন তিনি।
এ বিষয়ে শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ টিআই একেএম শরফুদ্দিন কোনো মাসোহারা নেন না দাবি করে যুগান্তরকে বলেন, লেগুনা এ মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করছে। লেগুনা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন এরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
আটক করলেই সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা আন্দোলনের হুমকি দেন। মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন পেলেই আমরা জরিমানা, মামলা, রেকারিং করে প্রতিটি অটো থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে থাকি।
জনবল কম হওয়ায় শতভাগ আইন প্রয়োগ করতে পারছি না। তিনি বলেন, কখনো কখনো অটোগুলোকে চিরতরে নষ্ট করার জন্য ডাম্পিংও করে থাকি।