কিশোর গ্যাং ‘ভাই-ব্রাদার গ্রুপ’র নেতৃত্বে নিশাত
কাফরুলের আতঙ্ক ২ শিকদার বাহিনী
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![কাফরুলের আতঙ্ক ২ শিকদার বাহিনী](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/05/12/image-673764-1683862389.jpg)
দুই শিকদার বাহিনীর আতঙ্কে রাজধানীর মিরপুরের কাফরুলবাসী। এক বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন নাঈমুর রহমান নিশাত ওরফে নিশাত শিকদার। অন্য বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন শাহীন শিকদার। নিশাত বাহিনীর সদস্যরা উঠতি সন্ত্রাসী। এরা স্থানীয়ভাবে কিশোর গ্যাং ভাই-ব্রাদার গ্রুপ হিসাবে পরিচিত। নিশাতের সরাসরি নেতৃত্বেই এলাকায় চলে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম। অস্ত্র আর মোটরসাইকেলসহ এলাকায় শোডাউন করে আতঙ্ক ছড়ায় এই বাহিনীর সদস্যরা। সন্ধ্যার পর এই বাহিনীর উৎপাত বেড়ে যায়। কেউ প্রতিবাদ করলে বা অপকর্মের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে গোপন আস্তানায় নিয়ে নির্যাতন চালায়। আর শাহীন শিকদার হলো পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড। ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত শাহীন এখন ভারতে পলাতক। বিদেশে পালিয়ে থেকে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকা। তার কথা না শুনলেই গুলি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বাহিনীর সদস্যরা। এলাকাবাসী এবং আইনশঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কেউ বাড়ি নির্মাণ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করলেই চাঁদা দিতে হচ্ছে এই দুই বাহিনীর সদস্যদের। জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করেও চাঁদা আদায় করছে বাহিনী সদস্যরা। শাহীন বাহিনী সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মেহেদী, রমজান, জামাল মোল্লা, স্টিল বাবু, গোল কাসেম, বল্টু রাশেদ, সোহেল, লম্বা মাসুদ, নোমান, ময়লা মাসুদ, খোকন প্রমুখ। আর নিশাত বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আছে প্যাস্কার ইমন. নূর, আশিক, শেখ ফরিদ, আমিনুল, পিচ্চি জিসান, মিরাজ, বিপ্লব, রাসেল, রাব্বি, লিওন, শাওন, সোহেল পাংখা সোহেল প্রমুখ। শাহীন শিকদারের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় খুন, চাঁদাবাজিসহ অন্তত আটটি মামলা আছে।
সূত্র আরও জানায়, নিশাতের নামে অস্ত্র, মাদক এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বেশ কয়েকটি মামলা এবং জিডি আছে। থরে থরে সাজানো মদের বোতলসহ নিশাতের সেলফি এবং কথা বলার দৃশ্যের স্থির চিত্রের ছবি যুগান্তরের হাতে এসেছে। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করার কারণে এলাকাবাসীকে প্রকাশ্যে মারধর করছে, নিশাতের এমন একাধিক সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজও যুগান্তরের হাতে এসেছে। স্থানীয় থানায় অভিযোগ করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ কারণে এখন অনেকে বাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। গত ২২ এপ্রিল রাজধানীর কাফরুল এলাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিশাতের প্রধান সহযোগী অস্ত্রধারী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হাসান শিশিরকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান জানান, শাহীন এবং শিশির বাহিনীর চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার তথ্য আমাদের কাছে আসার পর থেকেই বাহিনী প্রধানসহ সদস্যদের ধরতে আমরা জোরালো তৎপরতা শুরু করি। কিছু দিন আগে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ নিশাত ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সে জামিন পেয়ে যায়। সম্প্রতি একটি অভিযানে অবৈধ বিদেশি পিস্তলসহ শিশিরকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরই পালিয়ে যায় নিশাত। গাঢাকা দেয় বাহিনীর অন্য সদস্যরা। অপরদিকে শাহীন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থেকে মিরপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এই বাহিনীর সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনতে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
সম্প্রতি র্যাবের দায়ের করা একটি মামলায় আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিশাত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হাসান শিশির। ওই জবানবন্দির কপি যুগান্তরেরর হাতে এসেছে। এতে শিশির উল্লেখ করে, ‘গত ১৯ এপ্রিল ইফতারের পর নিউমার্কেটে শপিং করতে যাই। ওই দিন রাত ৯টার দিকে বন্ধু মাকসুদুল আমাকে ফোন দিয়ে বলে, নিশাত ভাই একটি জিনিস তোমার বাসায় রাখতে বলেন। আমার অনুমতি নিয়ে মাকসুদুল জিনিসটা আমার বাসায় তোশকের নিচে রেখে আসে। নিশাত ভাইয়ের কাছে অস্ত্র থাকে এটা আমি জানতাম। ওই দিন সারা রাত নিউমার্কেটে ছিলাম। বাইরে সেহরি খেয়ে বাসায় আসি। দুপুরে র্যাব এসে আমার বাসা সার্চ করে তোশকের নিচে একটি পিস্তল পায়।’ জবানবন্দিতে শিশির আরও বলেন, ‘নিশাত ভাইয়ের কথা না শুনলে আমাদের ডিস্টার্ব করে। তার নামে বহু অভিযোগ আছে। কাফরুল থানাতেই তিনটি মামলা আছে।’