Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বাবুরহাটে ক্রেতা কম ঈদবাজারে খুশি নন কাপড় ব্যবসায়ীরা

‘দাম বাড়ার কারণেই চাহিদা কমছে’

Icon

বিশ্বজিৎ সাহা, নরসিংদী

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাবুরহাটে ক্রেতা কম ঈদবাজারে খুশি নন কাপড় ব্যবসায়ীরা

বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেকেরচর বাবুরহাটে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রঙ আর সুতার দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে কাপড়ের দাম। তাই বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষ্যে নিত্যনতুন বাহারি ডিজাইনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। তাই হতাশ হাটের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে কাপড় কেনায় মানুষের আগ্রহ কমছে। ফলে পাইকারি ক্রেতারা তুলনামূলক কম কাপড় কিনছেন। এসব কারণে বাবুরহাটের সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে কোটি কোটি টাকা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এখন প্রতি সপ্তাহে হাটে দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।

নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত ‘প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার’ খ্যাত শেখেরচর দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট। এখানে বিভিন্ন জেলার কাপড় ব্যবসায়ীদের যাতায়াত। এই হাটে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। ৭৯ বছর ধরে চলা এই হাট প্রথমে বসতো সপ্তাহে একদিন। বর্তমানে সপ্তাহে বৃহস্পতি থেকে শনিবার ৩ দিন বসে। দেশের নিত্যব্যবহার্য কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করছে এই হাট। তাঁতসমৃদ্ধ নরসিংদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কাপড় ও কাপড়জাত পণ্য বিক্রি হয় এই হাটে। রুমাল থেকে জামদানি শাড়ি পর্যন্ত সব কাপড় পাওয়া যায় এক হাটে। তাই দেশের প্রায় সব জেলার কাপড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে আসেন এখানে। ঈদ উপলক্ষ্যে কাপড় কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন বাবুরহাটে। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট, বেডশিট, থানকাপড়, গজকাপড় বিক্রি হয় এই হাটে। নিত্যনতুন ডিজাইনের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কাপড়ের দাম বৃদ্ধির ফলে পাইকাররা কম কাপড় কিনছেন এ বছর। তবে কিছু কিছু দোকানে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। বিদেশের বাজারে লুঙ্গি রপ্তানিকারক আমানত শাহ গ্রুপের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না দোকানিরা।

কাপড় ব্যবসায়ী রঞ্জিত সাহা বলেন, প্রতিটি কাপড়ের দাম বেড়েছে। তাই এ বছর ঈদের বেচাকেনা খুব খারাপ। গত ১০-১৫ বছরে ঈদের মার্কেটে এত খারাপ বেচাকেনা হয়নি। গ্যাস, বিদ্যুৎ আর রঙ সুতার দাম বাড়ায় ডাইং, প্রিন্টিংয়ের খরচ বেড়েছে। তাই বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। এতে প্রতি পিস শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিসে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। থান কাপড়ে প্রতি গজে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। যে কারণে এখন কাপড়ের বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম।

থ্রি পিস ব্যবসায়ী সুমন বলেন, বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। অন্যান্য কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদের বেচাকেনা সর্বনিু পর্যায়ে রয়েছে। বেচাকেনা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা না হওয়ায় পাইকারি ক্রেতারা কম কাপড় কিনছেন। লুঙ্গি ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন দাস বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে এ বছর অর্ধশতাধিক নতুন ডিজাইনের লুঙ্গি বাজারে এসেছে। ৮০ ভাগ বিক্রি হয়েছে। ২০ ভাগ রয়ে গেছে। আশা রাখছি ঈদের আগে সেগুলোও বিক্রি হবে। আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়া বলেন, আমাদের উৎপাদিত লুঙ্গি ভারত, দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ বছর লুঙ্গির সঙ্গে টুপি, তসবি ও আতর উপহার দেওয়া হচ্ছে। ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার লুঙ্গিও পাওয়া যাচ্ছে।

পাইকারি ক্রেতা মোসাম্মত ফরিদা খাতুন বলেন, গাজীপুরে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমি সব সময় বাবুরহাট থেকে পাইকারি কাপড় ক্রয় করি। এর কারণ এক হাটেই সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। দামও তুলনামূলক কম। বাবুরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হাটকে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে।

বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এবারের রমজানজুড়ে প্রতি হাটে গড়ে লেনদেন হচ্ছে আড়াইশ কোটি টাকা। পুরো রমজান মাসে এক হাজার কোটি টাকা লেনদেনের আশা করছেন বণিক সমিতির এই নেতা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম