Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

আশা জাগাচ্ছে অত্যাধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি

৩০ মিনিটে সব বর্জ্য ক্রাশ করে জীবাণুমুক্ত সাধারণ বর্জ্যে পরিণত করে * কমে যায় বর্জ্যরে আকার ও ওজন * ৬০টি দেশে ব্যবহার হচ্ছে এই যন্ত্র

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আশা জাগাচ্ছে অত্যাধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি

দেশের হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি আশা জাগাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত যন্ত্রটি দিয়ে প্যাথলজিক্যাল, অ্যানাটমিক্যাল, রাসায়নিক, সংক্রামক, তেজস্ক্রিয়, ধারালো, তরল ও উচ্চচাপীয় বর্জ্যকে ৩০ মিনিটে সাধারণ বর্জ্যে পরিণত করা যায়। এতে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক জীবাণু যেমন-ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও সংক্রমণজনিত রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যে কেউ যন্ত্রটি পরিচালনা করতে সক্ষম। সব হাসপাতালে এটি চালু হলে মেডিকেল বর্জ্যরে মাধ্যমে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন দেশের তিনটি বড় হাসপাতালের চারটি মাইক্রোওয়েভ মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দুটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি এবং টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি। মেশিনগুলো দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা রোগীদের ব্যবহৃত গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, সিরিঞ্জ, সুঁই, বোতল, স্যালাইন ব্যাগ, নল, ছুরি-কাঁচি, শরীর থেকে কেটে ফেলা অংশসহ দৈনিক গড়ে ৩ হাজার কেজির বেশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের সরকারি শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, এ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা হাসপাতাল থেকে মেডিকেল বর্জ্য এনে মেশিনে দিচ্ছেন। এতে ওই বর্জ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরোয় পরিণত হচ্ছে। এরপর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত উত্তপ্ত করে ৯৯.৯৯৯৯৯ (এইট লগ টেন) পর্যন্ত জীবাণু ধ্বংস করা হয়। মেশিনের ভেতরে থাকা ঘূর্ণায়মান ব্লেডগুলো জীবাণুমুক্ত শুকনো ও দুর্গন্ধমুক্ত বর্জ্যগুলোকে বের করে দেয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব ধরনের সংক্রমিত বর্জ্য সাধারণ বর্জ্যে পরিণত হয়। পরে সেগুলোকে সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে মাত্র ১০ মিনিটের জন্য একজন অপারেটরের প্রয়োজন হয়।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এসকেএম শুয়াইবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এই মেশিন ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে এসেছে। সব হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা হলে ভালো হবে। স্বল্প সময়ে বর্জ্য বিশুদ্ধকরণ, স্থাপনে জায়গা কম লাগায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন এ পদ্ধতি আশা জাগাচ্ছে।

বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকরা বলেন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। যে বর্জ্যে জীবাণু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়, সেগুলো এই মেশিনে দেওয়া হয়। মেশিনটির ভেতরে থাকা ধারাল ব্লেড দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে সবকিছু মুহূর্তেই ডাস্ট হয়ে যায়। এগুলো টেক্সটাইল মিলের ফেলে দেওয়া সুতার মতো মনে হয়। এর ফলে বর্জ্যগুলো আগের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম জায়গা দখল করে এবং ২৫ শতাংশ ওজন কমিয়ে ফেলে। কেউ ইচ্ছা করলে জীবাণুমুক্ত বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতেও পারে।

বর্তমানে মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, কম্বোডিয়া, তুর্কিমিস্তান, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৬০টিরও বেশি দেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার খুবই ভালো। সব বর্জ্য একদম ক্রাশ করে জীবাণুমুক্ত করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। এতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকছে না। তিনি বলেন, মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি শুধু মেডিকেল বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে বিষয়টি এমন নয়। মেশিন থেকে বের হওয়ার পর বর্জ্যরে আকার ও ওজন অনেকাংশেই কমে যায়।

এদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত পর্যায়ের হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, আয়া, বর্জ্য বহনকারী ও ক্লিনারদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশের রক্তে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। ২৯৪ জনের ওপর গবেষণা চালানো হয়। এরমধ্যে ২০৩ পুরুষ ও ৯১ নারী। যাদের রক্তে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই জানেন না তারা আক্রান্ত। গবেষণায় আরও দেখা যায়, বর্জ্য বহনকারী একজন কর্মী প্রতি সপ্তাহে কর্মকালীন সময়ে কমবেশি ২৫ বার ধারাল বর্জ্যে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এর কারণ তাদের বেশিরভাগই বর্জ্য হ্রাসকরণ, চিহ্নিত ও পৃথকীকরণ, পরিবহণ এবং সাময়িক সংরক্ষণ সম্পর্কে বিস্তরিত জ্ঞান রাখেন না। ফলে এই কর্মীরা ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস-বি, সি, যক্ষ্মা, শ্বাসনালির রোগ, রক্তবাহিত প্রদাহ, এইডস ও সার্স ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম