পচে যাওয়া তরমুজে দূষিত কীর্তনখোলা
সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পচে যাওয়া লাখ তরমুজ এখন ভাসছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে। শুধু নদীতে নয়, নদীর তীরে যেন পচা তরমুজে পাহাড় জমেছে। এর গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে-বাতাসে সর্বত্র। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
গত দেড় সপ্তাহ ধরে পচা তরমুজ ফেলা হচ্ছে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য মোকাম সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে। তবে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বরিশাল সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় পরিবেশবাদীদের।
জানা গেছে, বরিশাল নগরীর কোলঘেঁষা কীর্তনখোলা নদী তীরের কলাপট্টি, পোর্টরোড ও বালিরঘাটের তিন মোকামে প্রতিদিন গড়ে একশ তরমুজ বোঝাই ট্রলার নোঙর করে। এখান থেকে এসব তরমুজ সড়ক ও নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছায়। তরমুজ ওঠার প্রথম দিকে চাষিদের মুখে হাসি ফুটলেও এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন।
কলাপট্টি, পোর্টরোড ও বালিরঘাট সংলগ্ন নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে কৃষকের ঘামে জন্মানো তরমুজ। অসময়ে ভারী ও শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ খেতে পানি জমায় তরমুজ পচে গেছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। এই মোকামে বিভাগের বরগুনা সদরসহ আমতলী ও তালতলী উপজেলা, ভোলা জেলাসহ চরফ্যাশন উপজেলা, পটুয়াখালীসহ জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী, চম্পাপুর, বালীয়াতলী, ধূলাসার, মিঠাগঞ্জ, কুয়াকাটা, লতাচাপলী, বাউফল উপজেলা, গলাচিপার চরবিশ্বাস, চরকাজল, চরসিদা, রাঙ্গাবালি, চরমোনতাজের কৃষকরা তরমুজ বিক্রি করেন।
বাকেরগঞ্জের তরমুজ চাষি শাহিন জানান, বৃষ্টির প্রভাবে পানি জমে যাওয়ায় খেতে তরমুজ রাখতে পারিনি। তরমুজের নিচে পানি জমে যাওয়ায় তরমুজে দাগ পড়ছে ও গোড়াও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিন লাখ টাকা খরচ করে মাত্র এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। তাই এ বছর ঋণের টাকাও ফেরত দিতে পারব না। এমন ক্ষতির হয়েছে আমার এলাকার চাষি ফারুক সরদার, ফরহাদ ও সালাউদ্দিনেরও। তাদের প্রত্যেকে দেড় থেকে ৮ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়েছেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর তরমুজ চাষি মো. হারুন জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে এই আড়তে একশ ছোট-বড় তরমুজের দাম ছিল ৮ হাজার টাকা। তরমুজ পচে যাওয়ায় এখন সেই তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকায়। এতে আমাদের খরচের টাকাও উঠবে না। পানি অপসারণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।
মোকামের তরমুজ বহনকারী শ্রমিক আমান উল্লাহ জানান, ট্রলার থেকে ট্রাকে প্রতি পিস তরমুজ ৪ টাকার বিনিময়ে তুলে দেই। বর্তমানে ঘাটে নোঙর করা ট্রলারের অধিকাংশ তরমুজ পচে যাওয়ায় দুইশ টাকাও আয় করতে পারিনি।
স্থানীয় রসুলপুর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, এর গন্ধ বাতাসের মাধ্যমে আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। রাবেয়া বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘গন্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে এই দুর্গন্ধ সহ্য করছি। আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি।
পোর্টরোডের তরমুজ আড়তদার সমির সাহা জানান, একটি ট্রলারে তিন হাজার তরমুজ এলে দুই হাজার তরমুজই পচা বের হয়। এ কারণে তরমুজ চাষিদের পাশাপাশি আমরাও চরম ক্ষতির মুখে রয়েছি। আর এসব পচা তরমুজ ফেলা হচ্ছে নদীতে। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় তরমুজগুলো আরও পচে পরিবেশ দূষণ করছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন স্কোপের নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, তরমুজের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির কারণে অনেক তরমুজ পচেও গেছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই তরমুজ চাষিরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তেমনি পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলা না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।