চট্টগ্রাম বন্দর
আটকা পড়া ৩ হাজার টন খেজুর খালাস শুরু
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রোজার পণ্য হিসাবে পরিচিত খেজুরের শুল্কায়ন নিয়ে জটিলতার আপাতত অবসান হয়েছে। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী উন্নতমানের খেজুর প্রতি কেজি ৪ ডলার, মাঝারি মানের খেজুর ২ ডলার এবং সাধারণ মানের খেজুর ১ ডলার রেফারেন্স ভ্যালুতে (দাম) শুল্কায়ন হচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে মঙ্গলবার থেকে খেজুরের শুল্কায়ন হয়। বুধবার থেকে শুরু হয় কনটেইনার খালাস। শুল্কায়ন জটিলতায় অন্তত ৩ হাজার মেট্রিক টন খেজুর আটকা পড়েছিল। আমদানিকারক ও কাস্টম হাউজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বা রেফারেন্স ভ্যালু নির্ধারণে উদাসীনতার কারণে একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে, অন্যদিকে বিপুল অর্থ দেশের বাইরে চলে গেছে হুন্ডির মাধ্যমে। আবার বাড়তি দামে খেজুরের শুল্কায়ন শুরু হওয়ায় ক্ষুদ্র আমদানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। কম শুল্ক দিয়ে ছাড় করা খেজুর বাজারে রয়েছে। তাই বেশি শুল্ক দিয়ে ছাড় করা খেজুর প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। লোকসান দিয়েই তাদের এসব খেজুর বিক্রি করতে হবে। সূত্র জানায়, একটি মাত্র এইচএস কোডের বিপরীতে আমদানি করা দুই ক্যাটাগরির খেজুরের শুল্কায়ন হতো। এর মধ্যে প্যাকেটজাত খেজুর ১ ডলার এবং বস্তাভর্তি খেজুর ৫০ সেন্ট রেফারেন্স ভ্যালু ধরে শুল্কায়ন করা হতো। আড়াই কেজির কম ওজনের প্যাকেটে ২৫ শতাংশ এবং আড়াই কেজির বেশি ওজনের বস্তা বা কার্টনে ১০ শতাংশ হারে শুল্কহার বিদ্যমান রয়েছে।
এর আগে কার্টনে আমদানি করা খেজুর প্রতি কেজি মাত্র ১ ডলার এবং বস্তায় আনা খেজুর প্রতি কেজি ৫০ (পঞ্চাশ সেন্ট) ভ্যালুতে শুল্কায়ন করা হতো। এই ভ্যালুতে হাজার হাজার টন খেজুর আমদানি ও খালাস হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী পণ্যের দাম ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারে পরিশোধ করা হলেও বাকি বিপুল অর্থ চলে যেত হুন্ডির মাধ্যমে। এতে দুই দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্র। একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব হারিয়েছে। অন্যদিকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়েছে বিশাল অঙ্কের অর্থ।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘সব ধরনের খেজুর একই দামে শুল্কায়ন করেছে কাস্টম হাউজ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। এখানে আমদানিকারকদের কিছু করার নেই। তবে যে দেশ থেকে খেজুর আমদানি করা হয়, সেই দেশের দাম অনুযায়ী শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হলে এ সমস্যা হতো না। হঠাৎ করে দুই থেকে আড়াই গুণ দামের ওপর সব ধরনের খেজুরের শুল্কায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমদানিকারকরা খেজুর খালাস বন্ধ রেখেছিলেন। তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আপাতত জটিলতা নিরসন হওয়ায় খেজুর খালাস নেওয়া শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তহিদুল আলম যুগান্তরকে বলে, ‘আমাদের মার্কেটে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানোর পরই খেজুর অমাদানিতে কারসাজির বিষয়ে জানতে পারি। তবে এটি আড়তদার বা ব্যবসায়ীদের সমস্যা নয়। এ সমস্যা আমদানিকারক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণেই খেজুরে রাজস্ব ফাঁকি কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটছে বলে আমি মনে করি।’
চট্টগ্রামের ফলমন্ডির বড় আড়তদার ও খেজুর ব্যবসায়ী শহীদুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘অধিকাংশ বড় আমদানিকারক কম মূল্যের ওপর শুল্ক দিয়ে হাজার হাজার টন খেজুর খালাস করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। যেসব ছোট আমদানিকারক, ৫-১০ কনটেইনার করে খেজুর এনেছেন তারাই এখন পড়েছেন বাড়তি শুল্কের খড়্গে। রোজার আগেই খেজুরের ব্যবসা ৯০ ভাগ হয়ে যায়। এখন খেজুরের চাহিদা কমে গেছে।