শত কোটি টাকা ব্যয় করে কেজিডিসিএল
অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা জমি ৭ বছর পরিত্যক্ত!
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণের জন্য নগরীর জিইসি মোড়ের ২৭ কাঠা জমি কিনেছিল। বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক অতিরিক্ত দামে কেনা সেই জায়গাটি ৭ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ ওই জায়গায় ৩৭ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (চউক) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন বা ছাড়পত্রও নেওয়া হয়েছিল। কেজিডিসিএলের পরিত্যক্ত সেই জায়গাটি মাদকসেবী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ আছে, ওই জায়গাটি বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দামে কিনেছিলেন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আইয়ুব খান চৌধুরী। এতে করে ভূমি মালিক কিংবা ক্রয়-বিক্রয়ের সমঝোতাকারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও কেজিডিসিএল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ অভিযোগটি তদন্তও করে।
সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের নিমিত্তেই জমিটি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে জিইসি মোড়ে যেখানে তখন প্রতি কাঠা জমির বাজারমূল্য ছিল ২ কোটি টাকা সেখানে ওই জমির মূল্য পড়েছে ৩ কোটি টাকারও বেশি। নিবন্ধনসহ যার মূল্য পড়ে ১০০ কোটি টাকার মতো। ভূমি কেনার পর পর এটিতে ৩৭ তলা ভবন নির্মাণের জন্য চউকের অনুমোদন নেওয়া হয়। ছাড়পত্র নেওয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার। প্রতিটি তলায় ১২ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর স্পেস হবে। ৩৭ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবনের পাশাপাশি পার্কিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। ৭টি ফ্লোর বাদে অবশিষ্ট ৩০টি ফ্লোর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলেও তখন মত দেওয়া হয়।
কেজিডিসিএল সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আসলাম যুগান্তরকে বলেন, জমিটি যখন কেনার উদ্দেশ্য ছিল সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা। কিন্তু জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ এখনো শুরুই হয়নি।
সূত্রমতে, অস্বাভাবিক মূল্যে জমিটি কেনার কারণে কেজিডিসিএল বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে সাত বছর ধরে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। জমির বিপরীতে খরচ হওয়া ১০০ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট থাকলে তা এতদিনে দ্বিগুণ হতো। দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানিয়েছে জমি কেনার টাকা ভূমি মালিকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ঠিকই, অস্বাভাবিক মূল্যে জমি কেনার জন্য যারা নেগোসিয়েশন কিংবা মধ্যস্থতা করেছেন তারা সেখান থেকেই বিপুল অঙ্কের টাকা পেয়েছেন, যা প্রমাণ করা কঠিন।
ওই জমি কেন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সে বিষয়ে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। জায়গাটিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন আছে কি না কিংবা কী অবস্থায় আছে, কেন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না, মামলাজনিত কোনো জটিলতা আছে কি না তা আমার পুরোপুরি জানা নেই। তা ছাড়া বর্তমানে আর্থিক সংকট রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রকল্পে ব্যয়ের বিষয়েও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’