Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

‘বসন্তবেলা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সালমা ইসলাম এমপি

কবি-সাহিত্যিকদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কবি-সাহিত্যিকদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, কবি ও সাহিত্যিকদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, কবি হওয়া কোনো সহজ বিষয় নয়। অনেকেই বিভিন্ন পেশায় জড়িত থেকেও কবিতা লিখছেন। তবে সব মানুষের উপযোগী কবিতা যারা লেখেন, তা অনবদ্য হয়ে ওঠে।

বুধবার কবি লুব্ধক মাহবুবের ‘বসন্তবেলা’ কাব্যগ্রন্থের ওপর আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিসি এসব কথা বলেন।

দৈনিক যুগান্তরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম। যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘বসন্তবেলা’র ওপর আলোচনায় অংশ নেন কবি ফারুক মাহমুদ, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি ও গবেষক প্রফেসর ড. সেলিম আকন্দ, কবি ও কথাসাহিত্যিক প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার, যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর, সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, সিটি এডিটর, কবি মিজান মালিক, যমুনা টেলিভিশনের উপপ্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও কবি পারভেজ আহসান, কবি ও কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগী, কবি আদিত্য নজরুল, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জন, কবি ইসরাত মেরিন ও কবি সানাউল্লাহ সাগর। অনুষ্ঠানে কবিতা লেখার অভিজ্ঞতা ও কাব্যগ্রন্থ ‘বসন্তবেলা’ সম্পর্কে কথা বলেন কবি লুব্ধক মাহবুব।

সালমা ইসলাম এমপি অনুষ্ঠানে তার ছোটবেলার একটি স্মৃতিকাতর কবিতা আবৃত্তি করেন। পল্লিকবি জসীমউদ্দীন মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস আগে সালমা ইসলামকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন। সালমা ইসলামের ডাকনাম খুকু। জসীমউদ্দীন সেই খুকুর চঞ্চলতা নিয়েই কবিতাটি লিখেন। সেই কবিতার লিখিত কপিটা হারিয়ে গেলেও সালমা ইসলাম তা হৃদয়ে ধারণ করে রাখেন।

অনুষ্ঠানে সালমা ইসলাম বলেন, যারা কবি, তারা সাহিত্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন। কবি হতে হলে তার অন্তর পরিষ্কার রাখতে হবে। কী লিখছেন, কোনদিক নিয়ে লিখছেন, কাকে নিয়ে লিখছেন এবং কাকে উৎসর্গ করছেন-এসবের মধ্য দিয়ে কবিতার একটি সুন্দর অবয়ব ফুটে ওঠে। যদি কবির অন্তর খারাপ হয়, কবিতার রূপ-রসও অন্যরকম হয়ে যায়। তাই তার ভেতরের রূপ-রসও খুব পরিষ্কার থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কবিতার ভাষা ও ছন্দ খুব সহজ-সাবলীল হতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ পড়তে পারে ও বুঝতে পারে। কবিতা যখন কঠিন ভাষায় হয়, তখন পাঠকপ্রিয়তা পায় না।

উপস্থিত সৃজনশীল লেখক ও কবিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সব শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে সহজ ভাষায় কবিতা লিখবেন। কারণ, আপনাদের লেখা বই সারা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। এমনকি দেশের বাইরেও যায়। ‘কবিকে বই পড়তে হয় না। কবিরা আল্লাহ প্রদত্ত দান। কবিতা পড়তে ছন্দ লাগে না। তারা এমন কিছু লিখেন, যাতে পাঠকরা মুগ্ধ হয়ে যান’, যোগ করেন তিনি।

‘বসন্তবেলা’র লেখক কবি লুব্ধক মাহবুবের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি বহু গুণের অধিকারী। অত্যন্ত মেধাবী। তিনি ছোটবেলা থেকে ইংরেজিতে কবিতা আবৃত্তি করতেন। তিনি একজন কণ্ঠশিল্পীও। অনুষ্ঠানে দেশের নামকরা কবিদের একসঙ্গে পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আড্ডার মধ্যমণি কবি লুব্ধক মাহবুবের সহধর্মিণী কবি ও কণ্ঠশিল্পী তাসলিমা মাহবুব, যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবু ও আহমেদ দীপু, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান, প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম, সহ-সম্পাদক লুবনা আহমেদ, ইমন চৌধুরী প্রমুখ।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটি কবি-মন আছে। ভাষা ও ছন্দের মধ্য দিয়ে যিনি ভেতরের বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারেন, তিনিই কবি হয়ে উঠেন। কবি লুব্ধক মাহবুব তার কবিসত্তাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘বসন্তবেলা’য় কবি চমৎকারভাবে নিজেকে প্রেমিক, বিদ্রোহী, সমাজবিশ্লেষক, এমনকি একজন রাজনীতিক হিসাবে তুলে ধরেছেন। একজন মানুষের বহুমাত্রিকতা লেখকের বইয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। এই জায়গায় কবি লুব্ধক মাহবুব সার্থক।

তিনি আরও বলেন, বহু কবি আছেন, যাদের অনেক কবিতার মধ্যে একটি কবিতা দিয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন।

কবিদের বেশি করে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা দরকার মনে করেন তিনি। কারণ, কবিরা আয়নায় তার চেহারার সঙ্গে মানুষের সব আবেগ ও অনুভূতিকে দেখতে পান। আর সেই প্রতিফলন কবিরা পাঠকের জন্য তুলে ধরেন। দেশে সাহিত্যসভা ও সাংস্কৃতিকধারা ফিরিয়ে আনতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

কবি ও গবেষক অধ্যাপক সেলিম আকন্দ বলেন, কবিতা মূলত সুনির্বাচিত শব্দের সমাহার। এই কবিতার বইয়ে বসন্ত ও প্রেমের কথা খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। এ কবিতার বইয়ে কবি সমাজের বিভিন্ন অসংগতিও তুলে ধরেছেন।

সাংবাদিক ও কবি মাহবুব কামাল বলেন, কবিতার প্রথম লাইন আসে স্বর্গ থেকে। বাকিটা কবি ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে তোলেন। কবিতা একটি স্বর্গীয় ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাহিত্যে যত শাখা আছে, এর মধ্যে কবিতা বিশুদ্ধতম শাখা।

অধ্যাপক ড. আনোয়ার হক বলেন, কবিতার জন্য অপেক্ষা করা ভালো। একটা ভালো কবির অপেক্ষার শেষ নেই। একটা ভালো কবিতা লেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

কবি ফারুক মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বাংলা কবিতার খুব খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। লেখক ও পাঠকের মধ্যে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সময়ে লুব্ধক মাহবুবের কবিতা পাঠক সহজে গ্রহণ করবে বলে আমি মনে করি।

যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর বলেন, লুব্ধক মাহবুব লেখক হিসাবেই নন, মানুষ হিসাবেও অসাধারণ। কবিতার চেয়ে যদি কবি ভালো হন বা সুন্দর হন বা সৎ হন, তাহলে মানুষ হিসাবেও তিনি সার্থক। আমাদের সমাজে অনেকেই ভালো কবিতা লেখেন।

যুগান্তরের সিটি এডিটর মিজান মালিক বলেন, কবি লুব্ধক মাহবুব একজন সাদা মনের মানুষ। সহজ মনের এই মানুষটি কবিতার রাজ্যে এত গভীরভাবে প্রবেশ করেছেন, তা আগে জানা যায়নি। তিনি ‘বসন্তবেলা’র সাফল্য কামনা করেন।

কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, কবি লুব্ধক মাহবুব কানাডায় বসবাস করেন। প্রবাসী যে চেতনা ও অনুভবের সংকট থাকে, সেখানে তিনি বাংলার সংস্কৃতিকে মেলবন্ধন করেছেন। একটা সমন্বয় করার চেষ্টা করেছেন। তার কবিতায় সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য শব্দের অপচয় কম বা নেই বললে চলে। কবি আবেগ বেশি প্রকাশ করেছেন, যা আরেকটু কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম