ডেমরা-রামপুরা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে
অধিগ্রহণযোগ্য জমি মালিকরা উপযুক্ত দাম নিয়ে শঙ্কায়
মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অধিগ্রহণযোগ্য জমির মালিকরা উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় ও শঙ্কায় পড়েছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ‘ডেমরা-রামপুরা সেতু-হাতিরঝিল’ সড়কে চার লেনের এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এজন্য রাজধানীর হাতিরঝিল, রামপুরা, মেরাদিয়া, বনশ্রী, শেখের জায়গা, আমুলিয়া ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসংলগ্ন এলাকার অনেক জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এরই মধ্যে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার-সংলগ্ন এলাকার জমির মালিকদের জমি অধিগ্রহণযোগ্য চিঠি দিয়েছে সওজ। চিঠি পাওয়ার পর জমির উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে জমির মালিকরা শঙ্কায় পড়েছে। কারণ জমির বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে সংশ্লিষ্ট মৌজার মূল্য অনেক কম।
সওজ সূত্র জানায়, রাজধানীর চিরচেনা যানজট ও নানা দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি)’ ভিত্তিতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের সড়ক ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটারে নেমে আসবে এবং হাতিরঝিল থেকে ডেমরায় আসতে ১০ মিনিট লাগবে। এতে দুটি সেতু, চারটি ইন্টারসেকশন, দুটি কালভার্ট, একটি ওভারপাস, ফুটওভার ব্রিজ ও টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড-সিমরাইল-ডেমরা সড়কের সঙ্গেও এটি সংযুক্ত করা হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি বাওয়ানীনগর এলাকার সংশ্লিষ্ট জমি মালিকদের সঙ্গে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন নিয়ে সভা করেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মৌজার দামের চেয়ে ওইসব জমির দাম ১০ গুণ বেশি দেওয়া হলেও উপযুক্ত দাম দেওয়া হবে না। কারণ বর্তমানে মৌজা মূল্য শতাংশ হিসাবে ডোবা জমির দাম ৪১ হাজার ৬০৫ টাকা, নাল জমি ৩ লাখ ৩০ হাজার ৩০১ টাকা, ভিটির মূল্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৮ টাকা ও বসতবাড়ির মূল্য ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮ টাকা। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান বাজার মূল্য জমিভেদে ১৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা শতাংশ। তাদের দাবি-অধিগ্রহণযোগ্য জমির বিনিময়ে ডেমরার রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের পরিত্যক্ত জায়গা দেওয়া হোক। কারণ অধিগ্রহণ করা জমির টাকা দিয়ে ওই সড়ক সংলগ্ন এলাকা ও আশপাশ এলাকায় জমি কেনা সম্ভব নয়। জমির মালিকদের অভিযোগ-এর আগে জমি অধিগ্রহণের টাকা পূর্ণাঙ্গভাবে অনেকেই পাননি। নতুন প্রকল্পের আওতাভুক্ত অধিগ্রহণযোগ্য জমির উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তারা সন্ধিহান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যুগান্তরকে বলেন, ২০ বছর আগে নাল ও ডোবার সংমিশ্রণ বড় জমি প্রায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। কিন্তু বর্তমানে মৌজার মূল্য অনুযায়ী তিনগুণ দাম দিলে জমির মূল্য হতে পারে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা। পৈতৃক জমির মালিকরা যুগান্তরকে জানান, কম দামে সড়ক বিভাগ জমি নিলে আমরা পথে বসে যাব। জমির বিনিময়ে লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের পরিত্যক্ত জায়গা আমাদের দেওয়া হোক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিগ্রহণযোগ্য জমির উপযুক্ত মূল্য দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারা বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী বাওয়ানী মিলের পরিত্যক্ত জায়গায় পুনর্বাসন করা সম্ভব।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত স্টাফ কোয়ার্টার-সংলগ্ন এলাকায় প্রকল্পটির আওতায় ৪০ থেকে ৫০ জন জমির মালিক রয়েছেন। এলাকায় যারা নতুন করে জমি কিনেছেন তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানা গেছে। অনেক কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, জমির মালিকরা উপযুক্ত মূল্য না পেলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন। অনেকে আর জমিও কিনতে পারবেন না। সবদিক বিবেচনা করে জমিদাতাদের লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের পরিত্যক্ত জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। এ বিষয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ ও প্রস্তাব নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।