Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

জমজমাট ঢাকা লিট ফেস্ট

সব ভ্যারিয়েন্টে একই টিকা নিয়ে আশাবাদী নই: সারাহ গিলবার্ট

Icon

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সব ভ্যারিয়েন্টে একই টিকা নিয়ে আশাবাদী নই: সারাহ গিলবার্ট

বাংলা একাডেমিতে ঢাকা লিট ফেস্টে শুক্রবার বক্তব্য দিচ্ছেন অক্সফোর্ডের করোনা প্রতিরোধক টিকা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট -যুগান্তর

জ্ঞান-বিজ্ঞান আর চিন্তার আদান-প্রদানের স্থল হয়ে উঠেছে ঢাকা লিট ফেস্ট। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সব সেশনে কথা বলছেন দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদরা। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনেই জমজমাট হয়ে ওঠে ঢাকা লিট ফেস্ট। সারা দিন ছিল নানা বয়সি মানুষের আনাগোনা। এদিন অক্সফোর্ডের করোনা প্রতিরোধক টিকা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট বলেন, ‘করোনার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জন্য একই ভ্যাকসিন নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী নই। আমরা যে ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করেছি, সেটি নির্দিষ্ট স্পাইক প্রোটিনে কাজ করে। এটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে, যা ভাইরাসকে অবরুদ্ধ করে।’ 
তিনি বলেন, ‘স্পাইক প্রোটিন বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে বদলায়। সব ভ্যারিয়েন্টের জন্য একই ভ্যাকসিন তৈরি করতে গেলে হয় তো আমাদের ভাইরাসের মূলে যেতে হবে। আমার কাছে এটি অসম্ভব মনে হয়। এই মুহূর্তে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’ শুক্রবার ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেশনে তিনি এ বলেন। নিজের গবেষণা শুরুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সারাহ বলেন, ‘আমি কর্মজীবনের শুরুতে যখন গবেষণা শুরু করতে চাই, তখন স্বাধীনভাবে গবেষণার জন্য অর্থায়ন করার মতো কাউকে পাইনি। এর একটি কারণও আছে। পিএইচডি করার পরও আমার কারও অধীনে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাকে নিজের অর্থায়ন নিজেরই জোগাড় করতে হয়েছিল। তাই বলব, সফলতা ধীরে ধীরে আসতে পারে। কিন্তু তার মানে এই না যে, যাত্রাটি উপভোগ করা যাবে না।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে যখন যেটার প্রতি আগ্রহ থাকবে, সেটার জন্য কঠিন সাধনা করার ইচ্ছা থাকতে হবে। সে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকা উচিত। এমন কোনো বিষয় নির্বাচন করা উচিত হবে না যে, এটি পড়ে পাশ করলে অনেক টাকা কামানো যাবে। আসলে সেটাই নির্বাচন করা উচিত, যেটার প্রতি আপনার অসীম আগ্রহ রয়েছে।’ 
অতীতের সঙ্গে এখনকার সময়ের অনেক ফারাক রয়েছে উল্লেখ করে সারাহ বলেন, ‘আগে টেস্ট কিট ছিল না, এখন আছে। পরীক্ষার সময় কমে এসেছে। আমরা অ্যানালাইসিস করার জন্য অনেক সময় পাই। আগে পরীক্ষায় শুধু শুধু অনেক সময় চলে যেত।’ আলোচনায় আরও অংশ নেন পাটের জিন আবিষ্কারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খান এবং গবেষক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
এদিন বর্ধমান হাউজে উপস্থিত হয়ে ‘অলটারনেট ভয়েস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশে ফেরার আকুতির কথা জানান রোহিঙ্গা কবি ও ফটোগ্রাফার আব্দুল্লাহ হাবীব, শাহিদা উইন ও আইলা আক্তার।
বর্তমান বিশ্বে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে কবি আব্দুল্লাহ হাবীব বলেন, ‘আমি কবিতার মাধ্যমে আমাদের দুঃখ-কষ্ট মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। আমাদের একমাত্র বাড়ি মিয়ানমার, আরাকান। আমরা সেখানে ফিরে যেতে চাই।’ মঞ্চে স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি তার লেখা ‘গিভ মি এ চার্জ’ শিরোনামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
রোহিঙ্গা কবি শাহিদা উইন বলেন, ‘আমি কবিতার মাধ্যমে আরাকানে কেমন ছিলাম এবং বাংলাদেশে কেমন আছি, সেটাও তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করা আইলা আক্তার বলেন, ‘এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এতবড় একটা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ যদিও আমাদের দেশ না, তবু আমরা এখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। কিন্তু আমরা আমাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চাই।’
আর ‘হাচ ক্রসওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন’ জয়ী উপন্যাস ‘দ্য হাংরি টাইড’ নিয়ে সেশনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পরিবেশে কিছু অদ্ভূত ও অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। শুধু এ অঞ্চলে না, ভেনিস বা মিয়ামিতেও বন্যা হচ্ছে, সান ফ্রান্সিসকোর রাস্তায় ম্যানহোল ফেটে পানির ফোয়ারা উঠছে। এসবের পেছনে মানুষই দায়ী।’ 
তিনি বলেন, জীবনের একপর্যায়ে আমার মনে হয়েছিল বর্তমান দক্ষিণ এশীয় ঔপন্যাসিকরা আধুনিক হওয়ার প্রয়াসে পশ্চিমা ধারা অনুসরণ করছেন। কিন্তু জীবন ও পরিবেশের সম্পর্কের জটিলতা এ ধারায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এই অভাববোধ থেকে লেখক শেকড়ের সন্ধান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনসা মঙ্গল কাব্য, পদ্মপুরাণ পড়েছি। আমার মনে হয়, এই পুরাণগুলোর কাব্যিক ধারা, বর্ণনাভঙ্গি ও চারিত্রিক উপস্থাপন আমাদের জটিল আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরার জন্য বেশি উপযোগী। শেকড়ের এ আধুনিক ধারা থেকেই লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছি।’
অমিতাভ ঘোষ আরও বলেন, ‘কলোনিয়ালিজমের আগ্রাসন পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বান্দা দ্বীপের জনগোষ্ঠীকে হত্যা করে ও দাস বানিয়ে মশলা ব্যবসায় ডাচদের আধিপত্য অর্জিত হয়। শুধু তখন নয়, জীবাশ্ম জ্বালানি ও উদ্ভিদকেন্দ্রিক রাজনীতি সব সময়ই প্রাসঙ্গিক ছিল। আমাদের শেখানো হয়েছে শিল্পায়ন বা ব্যবসার মতো শুধুই মানবকেন্দ্রিক ধারণা ‘উন্নতি’ বা ‘উন্নয়ন’, যেখানে কোনো আত্মিক সংযোগ নেই।’ লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্রে সঞ্চালনায় ওঠে আসে লেখকের পদ্মাপার থেকে ইতালির ভেনিস, বিহার, শৈশবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আড়িয়ালখাঁ, কীর্তিনাশা, উন্মত্ত পদ্মার স্মৃতি। 
একটি সেশনে সাফ জয়ী কোচ ও মেয়েরা এসেছিলেন। তাদের এ পর্যন্ত উঠে আসার অম্ল-মধুর গল্প শুনে পুরো সময়টুকু যেন দর্শকরা ঘোরের মধ্যে কাটিয়েছেন। বাংলা একাডেমির লনে দুপুরে দর্শকদের সামনে উপস্থিত ছিলেন সাফজয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী কোচ মাহমুদা আক্তার ছাড়াও শামসুন্নাহার জুনিয়র, রূপনা চাকমা, সোহাগী কিসকু ও ইতি রানী মণ্ডলসহ অন্যরা। তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিকরা। সকালে বাংলা একাডেমির লনে ‘চাপের মুখে সাংবাদিকতা’ শিরোনাম সেশনে আলোচনা করেন তারা। সাংবাদিক তানিম কবিরের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রতিদিনের বাংলাদেশ’র সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ও ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব।
‘বিয়িং গান্ধী’ শিরোনামে সেশনে কথা বলেন গান্ধী নিয়ে লেখা বইয়ের লেখক পারো আনন্দ। বর্ধমান ভবন প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে, ‘কথাসাহিত্যের ভিতর বাহির’ অধিবেশনে কথা বলেন সাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন। অধিবেশন সঞ্চালনা করেন মোস্তাক আহমেদ। নজরুল মঞ্চে ‘আগামীর আখ্যান’ শিরোনামে অধিবেশনে অংশ নেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও স্বকৃত নোমান।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম