Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ইসকন ইস্যু

রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি দেখছে

আদালতের হস্তক্ষেপ উচিত হবে না : হাইকোর্ট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি দেখছে

ইসকন ইস্যুতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এ সময় উচ্চ আদালত বলেছেন, রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি দেখছে। আমাদের জানমালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে জানায়, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী হত্যার প্রেক্ষাপটে তিনটি মামলা হয়েছে। ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ছয়জনকে শনাক্ত করা গেছে, যারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন এ তথ্য জানান। একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, তারা শুনে আশ্বস্ত হয়েছেন যে, সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। কর্তৃপক্ষের তৎপরতা যেন জারি থাকে।

ইসকন ও চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত বুধবার আদালত তুলে ধরে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দেওয়ার আরজি জানান আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন। ইসকন নিষিদ্ধ করা এবং চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও রংপুরে আপাতত ১৪৪ ধারা জারিরও আরজি জানান তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে আদালত গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনেন। এরপর আদালত এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে অগ্রগতি জানতে চান। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ পদক্ষেপের অগ্রগতির তথ্য আদালতে তুলে ধরে।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন বলেন, সরকার এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এবং প্রধান একটি ইস্যু ধরে অ্যাকশন নিয়েছে। পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করেছে। তিনটি মামলার একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন ও অপরটিতে ৪৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিটিটিভির ফুটেজ দেখে ছয়জনকে শনাক্ত করা গেছে, যারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিশ্চয়ই আরও তথ্য বের হয়ে আসবে।

আসাদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, যেসব স্থানের কথা এসেছে, যেসব জায়গায় এ ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে, প্রত্যেক জায়গাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। সরকার এটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অ্যাড্রেস করেছে।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা শুনে আশ্বস্ত হলাম, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন। ঘুরেফিরে একটাই কথা, দেশের জনগণের জান ও মাল, কারও যেন কোনো ক্ষতি না হয়, এটা সবারই চিন্তা। আপনারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন শুনে আদালত আশ্বস্ত হয়েছে। আশা রাখছি, মনির (আইনজীবী, যিনি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে এনেছেন) বা মনিরের মতো যাদের উদ্বেগ, তারাও আস্বস্ত হবেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, কর্তৃপক্ষকে জানাবেন, তাদের তৎপরতা যেন জারি থাকে। অবশ্য জারি তো রাখবেনই আইন অনুসারে, যাতে কোনো কর্নার থেকে কেউ কোনো কথা বলতে না পারে।

এদিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী মনির উদ্দিন বলেন, ‘১০টি রাষ্ট্রে ইসকন নিষিদ্ধ। অতীতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতার করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়ছিল, তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো বিবৃতি দেয়নি। মসজিদ রক্ষার জন্য লোক মারা গেছে, তখনো কোনো বিবৃতি নেই। ভারত থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হলো, চিন্ময় দাসকে মুক্তি দেওয়া হোক। তখনই আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের আইনজীবী ভাইকে হত্যা করা হলো। খুবই বিভীষিকাময়। এদের (ইসকন) কার্যক্রম খুবই বিশৃঙ্খল ও উচ্ছৃঙ্খল। তাই এখন এদের নিষিদ্ধ করা দরকার।’

আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছে, এটি তাদের দায়িত্ব। আমাদের জানমালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তারা দেখছেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে। সুতরাং এখানে এই মুহূর্তে আদালতের ইন্টারভেনশনের (হস্তক্ষেপ) প্রয়োজন পড়ে না। রাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আছি সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে আছি।’

শুনানিতে অংশ নিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, তিনটি মামলা হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সম্ভাব্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে যেকোনো আদেশ দেওয়া সমীচীন হবে না।

এ সময় আদালত বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তাই এখন কোনো প্রয়োজন (আদেশ) তো নেই। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, কোনো ধরনের ঘাটতি প্রতীয়মান হলে, তা ভিন্ন বিষয়। এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা সংবিধানের অভিভাবক। সুতরাং সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে গেলে আইনের ভেতর দিয়ে যতটুকু প্রয়োজন আমরা নিশ্চয়ই কাজ করব, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমরা মনে করি দেশের মানুষ অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হলেও মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রত্যেকের প্রত্যেকের সঙ্গে। আমাদের বিশ্বাস এই সম্পর্ক কোনো দিন ভাঙবে না। আমাদের একজনের প্রতি একজনের যে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এটা কোনো দিনও নষ্ট হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম