
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০১ পিএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিনোদনকেন্দ্রে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত আনন্দ উপভোগ করতে এসব পর্যটন স্পটে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষ ভিড় জমায়। এবার আশানুরূপ পর্যটনের আগমনে খুশি সংশ্লিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ীরা। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান : রাজশাহী মহানগরীর শহিদ জিয়া শিশুপার্ক, বড়কুঠি পদ্মার পাড়, সীমান্ত নোঙর, ভদ্রা শিশুপার্ক, রাজশাহী চিড়িয়াখানা ও কেন্দ্রীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে পদ্মাপাড়ে ছোট-বড় সব বয়সি মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। খাগড়াছড়িতে ঈদের প্রথম দিন থেকেই আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরণা সবখানেই পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। পরিবার, স্বজন, বন্ধুদের নিয়ে বিনোদনকেন্দ্রগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিনোদনকেন্দ্রগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশুরা। পযর্টনকেন্দ্রগুলোতে থাকা রাইডগুলো শিশুদের প্রধান আকর্ষণ। বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ মেতে উঠছে তারা। এছাড়া ঘোড়ায় চড়ছে কেউ কেউ। ঈদে পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে পেরে খুশি কোমলমতি শিশুরা। খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইনচার্জ উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। টানা ৯ দিনের বন্ধ থাকায় বাকি দিনগুলো পর্যটকদের ভিড় অব্যাহত থাকবে।’ পটুয়াখালীতে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাসহ সব পর্যটন স্পট, বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। হোটেল-মোটেলগুলোতে সিট নেই। আশানুরূপ পর্যটকের আগমনে খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের একমাত্র স্থান সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় এবার যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া গঙ্গামতির সৈকত, রাখাইন পল্লি, রাখাইন মার্কেট, মিশ্রীপাড়ায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির, কুায়াকাটার কুয়া, সমুদ্রে ভেসে আসা সোনার নৌকা, ইকো পার্ক, ইলিশ পার্ক, লেম্বুর বন ও সৈকতের ঝাউবাগান, কুয়াকাটার পশ্চিমে সমুদ্রপথে দ্বিতীয় সুন্দরবনখ্যাত ফাতরার বন, লাল কাঁকড়ার চর, শুঁটকি পল্লিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নামে। চুনারুঘাটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঈদে পর্যটকের ঢল নেমেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে এবার সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে চুনারুঘাটে। বিশেষ করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও চা বাগানের পথে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ঈদের ৩ দিনে প্রায় ৩ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। শুধু সাতছড়িই নয়, পুরাতন মহাসড়কের চুনারুঘাট থেকে তেলিয়াপাড়া পর্যন্ত চা বাগানের পথে পথে মানুষের ভিড় নামে। রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য, গ্রিনল্যান্ড পার্ক, রামগঙ্গা ব্রিজ পয়েন্ট, পরীবিল ও শাপলবিলসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্মরণকালের রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকদের ভিড় ছিল। খুলনার কায়রায় সুন্দরবন সংলগ্ন কাটকাটা লঞ্চঘাটে মানুষের পদচারণায় ছিল মুখরিত। একটু হিমেল বাতাস খেতে আর নদীর পাড় থেকে বিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজির হয় শত শত মানুষ। মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু কয়রার মানুষ নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ছুটে এসেছে কপোতাক্ষ আর শাকবাড়িয়া নদী দেখার পাশাপাশি সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। এছাড়াও সুন্দরবনের শেখেরটেক, কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র, নির্মাণাধীন কেওড়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র, শিবসা নদীর তীরে রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, নীলকমল, কাটকাটা পর্যটন স্পটে। ভূঞাপুরে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণবিলাসীদের ঢল নেমেছে। যমুনা নদীর সৌন্দর্য, নদীতে সূর্যাস্ত, যমুনা সেতু ও যমুনা রেলসেতু দুটি দেখার জন্য হাজারো দর্শনার্থীর ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। ঝিনাইগাতী উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র ‘গজনী অবকাশ’-এর নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও বিভিন্ন বয়সের বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসু মানুষ। ঈদের দিন থেকেই এ পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা ভ্রমণ করছেন বিনোদনের জনপ্রিয় এই স্থানে। চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর, বাহারেরঘাট ব্রিজ, আকালুর ঘাট ব্রিজ ও নির্মাণাধীন হরিপুর-চিলমারী সেতু এলাকায় বিনোদনপ্রেমীদের ঢল দেখা গেছে। পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসব স্থান বিনোদনপ্রেমী মানুষের পদচারণায় মুখোরিত থাকতে দেখা গেছে। জয়পুরহাট জেলা শহরের প্রিন্সের চাতালের শিশু উদ্যান, ডিসি পার্ক, পাঁচবিবি’র বিপ্লবী ডাক্তার আব্দুল কাদের পৌর পার্ক, লকমার প্রাচীন জমিদারবাড়ি ও তুলসীগঙ্গা নদী তীরবর্তী-ঐতিহাসিক পাথরঘাটা, কালাইয়ের নান্দাইল দিঘীরপাড়সহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে শিশু ও নারীসহ নানা বয়সি মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কাউনিয়ার তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু এলাকায় বিনোদনপ্রেমী মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তিস্তা সেতু এলাকায় বিনোদনপ্রেমী মানুষের ভিড় সামলাতে সেতুপাড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিস্তা সড়ক সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। বাগাতিপাড়ায় দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত বিনোদনকেন্দ্র ইউএনও পার্ক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মস্থল থেকে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের ঈদ আনন্দের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে এই বিনোদন পার্ক। আগৈলঝাড়ায় পদচারণায় মুখর ছিল পয়সারহাট সেতুটিতে। পর্যটনের সব সুবিধা না থাকলেও আনন্দ উপভোগের কমতি ছিল না আগত ভ্রমণপিপাসুদের। মাধবপুরে ড্যাম ঈদ উপলক্ষ্যে দর্শনার্থীদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রাবার ড্যামের কর্মকর্তারা বলছেন, চৌমুহনীর রাবার ড্যামকে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা সৃষ্টি করে দিতে পারলে প্রতিবছর এখানে হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। দুর্গাপুর ঈদ উপলক্ষ্যে সাদা মাটির পাহাড়, রানীখং মিশন, হাজং মাতা রাশি মণি স্মৃতি সৌধ, কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি জাদুঘর, ঐতিহাসিক কমল রানীর দিঘী, সুসঙ্গ রাজবাড়ী, মানবকল্যাণকামী অনাথালয়, নীল পানির জলাধার, সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি, কমলা বাগান, ফান্দা ভ্যালি, সোমেশ্বরী নদীর কাঠের সেতুসহ বিভিন্ন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে। চট্টগ্রামে ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সোমবার ঈদের দিন বিকাল থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যায় দর্শনার্থীরা। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা ভিড় করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। শিশু-কিশোরের পাশাপাশি বয়স্কদেরও দেখা গেছে এসব বিনোদন কেন্দ্রে। কেউ কেউ ছুটেছেন প্রকৃতির টানে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। এছাড়া সন্ধ্যার পর জমজমাট হয়ে উঠে নগরীর উন্মুক্ত স্থানগুলো। বুধবার সরেজমিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে পশু-পাখি দেখতে সকাল থেকেই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বিশেষ করে মৈনটঘাটে ভিড় চোখে পড়ার মতো। ঈদের ছুটিতে যানজট ও কোলাহল মুক্তস্থান হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণ পিয়াসী দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে এসেছেন। যার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি মিনি কক্সবাজার এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বান্দরবান জেলা সদরের পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, চিম্বুক, ডাবল হেন্ডস ভিউ, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, বুড্ডিস্ট ট্যাম্পল’সহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের ঢল নেমেছে। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।