Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

সেতাবগঞ্জ চিনিকল বন্ধ ৪ বছর

নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি রুদ্ধ হাজারো মানুষের জীবিকার পথ

Icon

একরাম তালুকদার, দিনাজপুর

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দিনাজপুর জেলার একমাত্র ভারী ও প্রাচীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে প্রায় চার বছর ধরে। এতে রুদ্ধ হয়েছে হাজার হাজার মানুষের জীবিকার পথ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্ধ থাকা সেতাবগঞ্জ চিনিকলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল ফের চালুর চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। সেতাবগঞ্জ চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, মিলটি চালু করতে দুই থেকে তিন বছরের প্রয়োজন। কিন্তু আখ চাষিরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এক বছরেই চালু করা সম্ভব দেশের অন্যতম বৃহৎ এ চিনিকলটি। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ৯০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২০ সালে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের। প্রাণচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ে চিনিকলকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এরই মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকলীন সরকার দেশের বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল ফের চালুর চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সেতাবগঞ্জ চিনিকলও। কিন্তু সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলছেন, চিনিকলটি চালু করতে দুই থেকে তিন বছরের প্রয়োজন। বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, আখ মাড়াই মৌসুমের তিন মাস মিলটি চালাতে আখের প্রয়োজন ৯০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি মৌসুমে সেতাবগঞ্জ চিনিকলে আখ চাষ হচ্ছে এক হাজার ২২৪ একর জমিতে, যা থেকে আখ উৎপন্ন হতে পারে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তাই মিলটি চালুর করার আগে আখ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের মোট জমি তিন হাজার ৮৬০ একর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমি দুই হাজার ৮৪২ একর। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, মিলটি চালু করতে আখের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবল নিয়োগ, যানবাহন ও যন্ত্রাংশ মেরামতের প্রয়োজন। তিনি বলেন, মিলটি চালু রাখলে অন্তত এক হাজার ৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন (স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক) ৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আখ মাড়াই বন্ধের পর মিলের যানবাহনগুলো অন্য মিলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি আর মহাব্যবস্থাপকের (কৃষি) একটি গাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। যে কয়টি ট্রাক্টর রয়েছে তা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে মিলের অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে মিলটি চালু করতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার আরও জানান, ইতোমধ্যে মিলটি চালুর সম্ভাবনা নিয়ে কৃষি বিভাগ, যান্ত্রিক বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে মিল কর্তৃপক্ষ মিলটি চালুর জন্য দুই থেকে তিন বছর সময়ের কথা বললেও আখ চাষি ও মিল চালুর ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে মিলটি এক বছরের মধ্যেই অর্থাৎ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকেই চালু করা সম্ভব। সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালুকরণ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আখ চাষি মো. বদরুদ্দোজা বাপন বলেন, মিলটি যে বছর বন্ধ করা হয়, সেই বছরই সেতাবগঞ্জ চিনিকলের জমি ও কৃষকদের জমিসহ মোট চার হাজার ১২ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়। মিল বন্ধের ফলে পরবর্তীতে অনেক কৃষক আখ চাষ বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আখ রোপণের সময়। সরকার যদি এখনই মিলটি চালুর ঘোষণা দেয়, তাহলে আখ রোপণের সময় রয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই মিলের জমি এবং কৃষকরা তাদের জমিতে আখ রোপণ করেন তাহলে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। তিনি বলেন, এজন্য অবিলম্বে মিল চালুর ঘোষণা দিয়ে মিলের জমিতে আখ রোপণের পাশাপাশি কৃষকদের আখ চাষে উদ্ধুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। বদরুদ্দোজা বাপন বলেন, ‘চিনিকলটি বন্ধ থাকায় এলাকার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমাদের এ অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা মানি সার্কুলার হতো। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে আমরা বাস করছি। অন্য ফসল চাষ করে আখ চাষিরা সংসারের খরচ চালাতে পারছেন না। আমাদের একমাত্র প্রাণের দাবি সেতাবগঞ্জ চিনিকল আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করা হোক। তাহলে এ অঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার হবে।’ বোচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বলেন, ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি দিনাজপুর তথা এ অঞ্চলের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ মিলটি এ এলাকার পরিচয় বহনের পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বারবারই মিলটি বন্ধ করে এ এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রতি কুঠারাঘাত করেছে। দেশের চিনি শিল্পকে ধ্বংস করে দেশকে আমদানি-নির্ভর করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থরক্ষা করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সেতাবগঞ্জ চিনিকল বন্ধ করে দেন। এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সেতাবগঞ্জ চিনিকল আবার চালু করে এ এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবারও চিনিকলটি বন্ধ করে দিয়ে চিনিকলকে ঘিরে এ এলাকার মানুষকে বেকার করে দিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম