ঘিওরে প্রকল্পের অর্থ ইউএনওর পকেটে
মো. নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইউএনও আমিনুল ইসলাম
অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্যসহ তার রয়েছে অসংখ্য দুর্নীতি। তিনি ৩৫তম ব্যাচের (বিসিএস) কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। তিনি যোগদানের পর থেকেই টাকার নেশায় বিভোর হয়ে পড়েন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৫টি প্যাকেজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার বাসাবাড়ি মেরামত, ড্রেনেজ মেরামত এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান ইউএনও। এই প্রকল্পের আওতায় কোনো কাজ করা হয়নি। কাজ না করেই ৪০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া একই অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিধন কার্যক্রমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যন্ত্রপাতি কেনাকাটার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। এ খাতের আওতায় কোনো যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়নি। যন্ত্রপাতি না কিনে তিনি বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ঘিওরের অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ড্রেজারপ্রতি মাসে এক লাখ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে ঘুস নিয়ে অবৈধ ড্রেজারের বৈধতা দেন। এই খাত থেকে গত এক বছরে তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে সরকারি জলমহাল ইজারা দিয়ে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে জলমহাল থেকে মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি অর্থায়নের দুটি সরকারি রাস্তার কাজ না করেই প্রকল্পের পুরো টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া চলতি বছরের জুলাই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন (এডিপির) আওতায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশে বেকার যুবকদের (নারী-পুরুষ) হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের টাকা ব্যাপক নয়ছয় করেছেন তিনি। ওই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসাবে নিজের নামে বিল ভাউচার করেছেন। ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মেম্বারদের অভিযোগ রয়েছে, মেম্বারদের বেতন উত্তোলন করার সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় এই ইউএনও আমিনুল ইসলামকে। এই টাকা তার সিএ আতাউর রহমানের মাধ্যমে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি উপজেলা ভবনের ১৮টি মেহগুনি গাছ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কমিটির কোনো অনুমতি ছাড়া তিনি নিজেই গাছ বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উপজেলা বাস্তবায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রশিক্ষক হিসাবে ২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমার নামে ৬ হাজার টাকার ভাউচার করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন কমিটির এক সদস্য জানান, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একসঙ্গে ৬০ লাখ টাকা প্রকল্পের কাজ না করেই তিনি সম্পূর্ণ টাকা নিজের পকেট ভারি করেছেন।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কাজ কিছু শেষ করা হয়েছে এবং কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা ক্ষুদ্র হস্তশিল্প যুবকদের স্বাবলম্বী করতে অনেক কাজ করেছি। আপনাকে এসব তথ্য দেয় কারা। মশা নিধন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানত চাইলে তিনি বলেন, আপনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করেন। কেনাকাটা না করা হলে সরকারি টাকা ফেরত দেওয়া হবে।