
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম

রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে আমাদের দেশে। এখানে বড় পরিসরে গল্প বলা যায় বলেই মেধাবী নির্মাতারাও ওটিটির দিকে ঝুঁকছেন। শুধু নির্মাতা নন, শিল্পীরাও এখন এ মাধ্যমে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। এর মূল কারণ, মাধ্যমটিতে কাজ করা যায় স্বাধীনভাবে। এখানে বাজেট বেশি ও কাজের ক্ষেত্রে সময়ও বেশি পাওয়া যায়-এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর বিস্তারের কারণে এখানে বিনিয়োগ যেমন হচ্ছে, তেমনি গড়ে উঠছে নতুন নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী। মাধ্যমটি নিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি এখন নির্মাতা-শিল্পীদেরও প্রশ্ন, ওটিটি কী তবে সিনেমা হলের বিকল্প হয়ে উঠছে?’ তবে এ বিষয়ে আবার তারা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বাংলাদেশে সিনেমা আগের মতো এফডিসিকেন্দ্রিক নেই। সিনেমা হল ছাড়াও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য সিনেমা তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঈদ উৎসবে যখন সিনেমার বাজার চাঙা হয়ে ওঠে, তখন সিনেমা হলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওটিটিতেও শুরু হয় প্রতিযোগিতা। বিষয়টি নিয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা দুটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
সিনেমা হল ও ওটিটি দুটিই একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সিনেমা হলকে ওটিটির বিকল্প হিসাবে না দেখলেও, ওটিটি সিনেমা হলের জন্যই ভালো বলেও দাবি করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী জয়া আহসান গণমাধ্যমে বলেন, ‘বড় পর্দার আবেদন বরাবরই অন্য রকম। নানা প্রযুক্তি এলে আমাদের সেসব মেনে নিতে হয়। তবে আমি অবশ্যই চাই, দর্শকরা যেন বড় পর্দার রস আস্বাদন করতে পারে। কিছু বিষয় বড় পর্দার জন্যই। ওটিটির আদল একটু ভিন্ন হয়। আমার কাছে দুটিই খুব প্রয়োজন।’
ওটিটি মাধ্যমের জন্য শিল্পীদের দারুণ কাজের সুযোগ হয়েছে উল্লেখ করে অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন যারা প্রকৃত অর্থে ভালো অভিনয়শিল্পী, তারা অনেকদিন ধরেই কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাদের প্রত্যাবর্তনের একটা দারুণ সুযোগ হয়েছে এ মাধ্যমটি আসায়। এ ছাড়া নির্মাতাদের সুবিধা হয়েছে অনেক। সবদিক বিবেচনায় আমি বলব ওটিটি আসলেই আমাদের জন্য ভালো। তবে সিনেমা হলের ব্যাপারটি ভিন্ন। দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।’
বিশ্বজুড়ে বিনোদনের মাধ্যম এখন দখল করে নিচ্ছে ওটিটি দাবি করে চিত্রনায়ক সিয়াম বলেন, ‘বিশ্বে যখন একটা সিস্টেম চলতে থাকে, সেটার বিপরীতে গিয়ে কিন্তু বেশি দিন টেকা যায় না। এর বিপরীতে গিয়ে যদি আমরা জোর করে বলতে থাকি দর্শককে হলে নিতেই হবে, সেটা সম্ভব হবে না। তার আগে বের করতে হবে, দর্শক সিনেমা হলে যায় না কেন?’
এদিকে ওটিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ততা এখন বেশি আব্দুন নূর সজলের। এ অভিনেতা বলেন, ‘এ মাধ্যমটিকে সাধুবাদ জানানো উচিত। ভালো-মন্দ থাকবেই, এটাকে মেনে নিয়েই কাজ করে যেতে হবে আমাদের। তবে সিনেমা হলের আবেদন কখোনই শেষ হবে না। বড় পর্দার আবেগের একটি জায়গা।’
নির্মাতা রায়হান রাফি বলেন, ‘যেখানেই মুক্তি দেন না কেন, কনটেন্ট ভালো হতেই হবে। এর বিকল্প নেই। সিনেমা হলে দর্শককে এমন কিছু দেখাতে হয়, যাতে তারা মুগ্ধ হয়ে অন্ধকার পরিবেশে পর্দায় তাকিয়ে থাকেন। আর ওটিটির ক্ষেত্রে গল্পে চমক খুব জরুরি। এর মাধ্যমে যত বেশি আটকে রাখা যায় মানুষকে। আমার কাছে দুটিই সমান পরিশ্রমের। যারা এখন সিনেমা হলে আসে তারা কিন্তু ওটিটিতে কাজ দেখে। তাই ওটিটি যত বিস্তৃত হবে, ততই সিনেমার দর্শক তৈরি হবে।’
এদিকে সিনেমা হলের চেয়ে ওটিটিকে এগিয়ে রাখছেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ। তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে সারা বিশ্বেই ওটিটির কাজ দেখা যায়। ফলে বাংলা ভাষাভাষি ছাড়াও অন্য দর্শকরা সাব-টাইটেল দেখে আমাদের কন্টেন্ট উপভোগ করছেন। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে তেমনটি নয়। ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দেশে মুক্তি দিতে হয়।’
তবে ওটিটি নিয়ে অনেক শঙ্কার কথাও উঠে আসে। অনেকের দৃষ্টিতে ওটিটি মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং মাধ্যমগুলোর ক্ষতির কারণ হতে পারে। আরেকটি ব্যাপার হলো বিষয় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি যৌনতা, অপরাধ, সহিংসতার সরাসরি চিত্রায়ণ অনেকে পছন্দ করছেন না। কিন্তু বৈশ্বিক চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিষয়টি স্বাভাবিক এবং এভাবেই কাজ হয়। এদিকে দেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে ওটিটির জন্য নীতিমালা তৈরির চিন্তা রয়েছে। সরকারের এ চিন্তা থেকেও বোঝা যায়, ওটিটিকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবা যাচ্ছে না।