হ্যালো...
সংগীতের শীর্ষে আরোহণে তাড়াহুড়া উচিত নয়
রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বরেণ্য সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম। ৭০-এর দশকে গানের জগতে আসা এ শিল্পী তার প্রজন্মে আধুনিক গানের এক নতুন ধারার সূচনা করেন। সিনেমায় প্রায় তিন শতাধিক গানে প্লেব্যাক করেন তিনি। সংগীত পরিবেশন করেছেন ২৮টির বেশি ভাষায়। বর্তমান ব্যস্ততা ও সংগীত ভাবনা নিয়ে আজকের ‘হ্যালো...’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি।
* গান নিয়ে এখন ব্যস্ততা কেমন
** স্টেজ শো নিয়মিত করছি। কিছু আধুনিক ও কবিতার গান করছি। এ প্রজন্মের মিউজিক ডিরেক্টরদের সঙ্গে কাজ করছি। কিছুদিন আগেও দুটি গানের রেকর্ডিং করলাম। টুকটাক ব্যস্ততা আছে বলা যায়।
* সিনেমার গান করছেন
** সাত আট মাস আগে একটি সিনেমায় গান গেয়েছিলাম। সেটাও উল্লেখযোগ্য কোনো সংগীত পরিচালক নয়। আসল কথা হচ্ছে, সিনেমার গান এখন আর আগের মতো হয় না বললেই চলে। যা কিছু হচ্ছে তাতে আমাদের মতো শিল্পীদের ডাক খুব কম আসে। যদি আমাকে ডাকে তবে গাইব।
* আপনার কণ্ঠের অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে। কোন গানগুলো আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন
** শ্রোতাদের কাছে তাদের হৃদয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রাখার মতো অনেক গান রয়েছে। তবে পছন্দের দিক থেকে বললে আমি দুটি গানকে এগিয়ে রাখব। একটি ‘বৈশাখী মেঘের কাছে জল’ ও অন্যটি ‘হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কী আছে’। এ দুটো গান আমাকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে বলে আমার ধারণা।
* যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় অনেক শিল্পীই দেশ ছাড়ছেন ও সংগীত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন
** এখানে কাকে অভিযুক্ত করব সেটা বলা মুশকিল। এখন অনেক নতুন ছেলেমেয়ে গান করছে প্রযুক্তির কল্যাণে। দেখা যাচ্ছে অনেক সিনিয়র শিল্পীর গানও তারা ঠিকঠাকভাবেই গাইছে। অনেকে এখন বলতেই পারেন যে, তাহলে তো সমস্যা নেই। দুজনেই তো ভালো গেয়েছে। সিনিয়র শিল্পী আর তার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। এর ফলেই কিন্তু প্রকৃত শিল্পীদের মধ্যে একটা হতাশা ও বিষণ্নতা কাজ করে। যখন একজন নতুন শিল্পীর সঙ্গে সিনিয়র শিল্পীকে একই পাল্লায় মাপা হবে তখন বিষণ্নতা কাজ করাটাই স্বাভাবিক। এতে অনেকে অভিমানে সংগীত থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিচ্ছেন। কারণ প্রকৃত শিল্পীরা খুব অভিমানী হয়।
* বর্তমান সংগীতচর্চা নিয়ে কী বলবেন
** এখন তরুণ প্রজন্ম গাইছে। আমি তাদের নিয়ে অনেক আশাবাদী। তাদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বাস করি তারা আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। তবে তাদের গানের সঙ্গে আরও ধৈর্য ধরতে হবে ও নৈপুণ্যের প্রতি আরও নিবেদিত হতে হবে। সংগীতের শীর্ষে আরোহণের জন্য তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। তাতে গান থেকে অর্থ উপার্জন হবে এটা ঠিক, তবে সংগীত হবে না।
* দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি কতটা
** গানে শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি বা এখন পাচ্ছি এটাই বড় প্রাপ্তি। কয়েক প্রজন্ম আমার গান শোনে। এখনো গাইতে পারছি এটাই আমার বড় পাওয়া। অপ্রাপ্তি বা অসন্তুষ্ট নই আমি। দীর্ঘজীবন গানেই ব্যয় করেছি। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক অবশ্য পাইনি। তবে এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ বা আফসোস নেই।