বৌদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিতে ঐক্য, সংহতি ও নাগরিক অধিকার

ড. সুকোমল বড়ুয়া
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ সামাজিক জীব এবং প্রত্যেক মানুষ এ বিশ্ব সমাজের একজন নাগরিক। আমরা পৃথিবীকে যদি একসঙ্গে অবলোকন করি, তাহলে মনে করা যাবে পৃথিবীর সব মানুষ একটি বৃহৎ পরিবারের অংশ। আমরা যে দিগন্তেই বসবাস করি না কেন, আমাদের সবারই একটি মাত্র পরিচয়-মানুষ। এ বিশ্বকে আমরা ভাগ করে দিয়েছি প্রকৃতি, পরিবেশ ও ভৌগোলিক কারণে এবং আমাদের সুবিধার জন্য এবং বাঁচার জন্য।
বিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে নানা দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দল, মত, শাসন-প্রশাসন এবং সাম্রাজ্য বিস্তার হয়েছে নানাভাবে। অথচ অন্তর্দৃষ্টি সর্বজনীন দৃষ্টিতে দেখলে আমরা একটিমাত্র পরিচয় পাই, তা হলো, আমরা মানুষ এবং আমরা সবাই বিশ্ব মানবসমাজের একেকটি পরিবারভুক্ত। মানুষ হিসাবে আমাদের সবারই অধিকার হবে এক ও অভিন্ন।
সংঘবদ্ধতা ও সংগঠনের অধিকার
মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, মানুষ জন্মসূত্রেই সামাজিক জীব। তাই বুদ্ধ ‘সংঘ’ ও ‘সংঘবদ্ধতার’ ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বুদ্ধের ধর্ম প্রচারের প্রথমেও দেখা যায় সংঘবদ্ধতা। বুদ্ধ চিন্তা করেছিলেন, তার শাসন ও ধর্মকে বাঁচাতে হলে ‘সংঘে’র বিকল্প নেই। যোগ্য উত্তরসূরি না থাকলে সব লুপ্ত হয়ে যায়। এমনকি রাজসিংহাসনও।
সংঘবদ্ধতার মাধ্যমে জগতে সব কাজ সম্ভব বলেই বুদ্ধ এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। বুদ্ধের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করার পেছনে ভিক্ষু সংঘের অবদান অনস্বীকার্য। আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে পরম্পরা ভিক্ষু সংঘ বৃদ্ধি করে বুদ্ধের শাসনকে এগিয়ে নিতে হবে। এখানে ‘পরম্পরা’ শব্দটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর থেকে এ সংঘ সৃষ্টি হয়েছিল বলেই পরম্পরা বুদ্ধের এ শাসন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে ভিক্ষু সংঘের অবদান অতুলনীয়। সংঘ বন্দনায় ওইসব গুণের কথা উচ্চারিত হয়েছে।
অতএব, বলা যায়, ‘সংঘ’ সৃষ্টি করা মানে একটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করা। এজন্য Association, Institution, Organization ইত্যাদিরও প্রয়োজন। পশ্চিমা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারও এ কনসেপ্ট স্বীকার করেছেন। তার মতে, ‘এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘটিত দলই (Group) সংঘ।’ তিনি এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনটি পন্থার কথা বলেছেন-১. ব্যক্তিগত প্রয়াস, ২. দ্বন্দ্ব সংঘাত বা প্রতিযোগিতা, ৩. সমধর্মী অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ হওয়া।
তবে সংঘবদ্ধতার কথা বলতে গেলে সমাজ-সম্প্রদায়ের বিষয়টিও চলে আসে। কারণ যে ব্যক্তি যে সমাজে বসবাস করে, সেখানেই এই সংঘ সৃষ্টি বা একতার প্রয়োজন। যেমন-ভিক্ষুদের জন্য ‘ভিক্ষু সংঘ’, গৃহীদের জন্য ‘গৃহী সংঘ’, বালকদের জন্য ‘বালক সংঘ’ ইত্যাদি। ভিক্ষু সমাজ হোক, আর গৃহী সমাজই হোক, সমাজের মধ্যে বসবাস করতে গেলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাদ-বিসংবাদ এবং নানা জটিলতা থাকবেই। ভিক্ষু সংঘের জটিলতা বা অপরাধমুক্তির জন্য যেমন পরিবাসের প্রয়োজন, তেমনি ঝগড়াবিবাদ নিষ্পত্তির জন্যও অধিকরণ সমর্থ-এর প্রয়োজন। বিনয়ের নানা পর্যায়, স্তর এবং নিয়মনীতি, আরোপ বিধি, অনুজ্ঞা ইত্যাদি সবই অধিকার সংবলিত, অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের লক্ষ্যে। সুতরাং এককভাবে জটিলতার সমাধান করা সম্ভব হয় না, সংঘবদ্ধতার প্রয়োজন হয়। এ সংঘবদ্ধতার পেছনে আবার অধিকারের প্রয়োজন। অধিকার ছাড়া জীবনযাপন করা অসম্ভব। তবে সেই অধিকার হবে সর্বজনীন, কুশলমুখী ও নিরাপদমূলক। সংঘবদ্ধতার অধিকার হবে নিঃস্বার্থ, সেবামূলক এবং লোভ, দ্বেষ, মোহহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে সংযমপূর্ণ এবং সামগ্রিক কল্যাণমূলক।
শিক্ষা অধিকার
এটি বিশ্ব মানবসমাজের একটি মৌলিক অধিকার। বুদ্ধ সর্বজনীন শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বুদ্ধের সময় মূলত বিহার, সংঘারাম ছিল শিক্ষাকেন্দ্র। সেসব শিক্ষাকেন্দ্র সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রসহ ভারতবর্ষে যে চতুর্বর্ণ প্রথা বিদ্যমান ছিল, বুদ্ধের শিক্ষানীতি সেসব বৈষম্য ও সব প্রাচীর ভেদ করে সব শ্রেণির মানুষকে বা শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বসে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেদিক থেকে বলা যায়, ভারতবর্ষে গৌতম বুদ্ধই ছিলেন সর্বজনীন শিক্ষা অধিকারের প্রবক্তা ও পথিকৃৎ। বৌদ্ধ শিক্ষায় কোনো ধরনের জাতি বিচার ছিল না, ছিল না কোনো ধরনের ধনী-দরিদ্র বিচারও। অর্থাৎ সমাজের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এবং সব পেশা-শ্রেণির জনগণ বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার পেয়েছে। তাও একসঙ্গে। ওই সময় মানবতার জন্য কী অসাধারণ শিক্ষা ছিল-ভাবলে অবাক হই। যেখানে নিম্নবর্ণ বলে পরিচিত চণ্ডাল, মুচি, মেথর এবং নানা জাতির উপস্থিতি ছিল মুখ্য। বুদ্ধের এ সর্বজনীন অধিকার সংবলিত শিক্ষানীতি মানবতার কত বড় বিজয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিদ্ধার্থ বাল্যকালে ৬৪ ধরনের লিপি বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণ মানবিক, মনুষ্যবোধের এবং কুশলকর্মে উৎসাহসঞ্জাত শিক্ষা। এ শিক্ষা আলোকিত হৃদয় বৃত্তির শিক্ষা। এ শিক্ষায় কারও একক অধিকার নেই, আছে সবার অধিকার। বুদ্ধ মঙ্গলসূত্রে ৩৮ ধরনের মঙ্গলবিষয়ক শিক্ষার কথা বলেছেন। সেখানে ব্যবহারিক ও শিল্প বিদ্যাকে যেমন প্রাধান্য দিয়েছেন, তেমনি বিনয়ে সুশিক্ষিত হওয়া এবং সত্য ও সুভাষিত বাক্যকেও অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। বুদ্ধের মতে, এ শিক্ষাগুলো সবাই ধারণ ও গ্রহণ করতে পারে এবং এগুলো সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার।
গণতান্ত্রিক অধিকার
মানবজাতির অন্যতম মৌলিক অধিকার হলো গণতান্ত্রিক অধিকার। এটি মানুষের মানবিক অধিকার। পৃথিবীর সব প্রান্তে, সব জায়গায় এ অধিকার ভোগ করা যাবে। গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে ব্যক্তির ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতার প্রশ্নটি আসে। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের জন্য তার গণতান্ত্রিক অধিকার বিদ্যমান থাকবে। মহামতি বুদ্ধের সর্বজনীন অধিকারের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল মুখ্য। বুদ্ধ তার ধর্ম ও শাসনের সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বুদ্ধ-সমকালীন ভারতবর্ষের রাজ্যগুলোয় এবং রাজ্য শাসনে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিদ্যমান ছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতে গোষ্ঠীনির্ভর গণতান্ত্রিক রাজ্যের ইতিহাসও রয়েছে। যেমন-কপিলাবস্তুর শাক্য, রাম-গ্রামের কোলিয়, বৈশালীর লিচ্ছবি বা বৃজি, কুশিনগর ও পাবার মল্ল, কেশপুত্রের কালাম, অল্লকপ্পের বুলি, সুংসমারীর ভগ্গ, পিপ্পলিবর্ণের মৌর্য, মিথিলার বিদেহ উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে শাক্য ও বৃজিগণ ছিলেন অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও গণতান্ত্রিক।
অর্থনৈতিক অধিকার
অর্থনৈতিক অধিকার হলো মানবাধিকারের অন্যতম একটি উপাদান। গৌতমবুদ্ধ সর্বক্ষেত্রে চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমতা। আজকে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যে সমতার কথা বলা হচ্ছে, তা আড়াই হাজার বছর আগেই মহামানব গৌতম বুদ্ধের বাণীতে উচ্চারিত হয়েছিল। এজন্যই বুদ্ধের মতবাদ ও তত্ত্বগুলো বিশ্বের নানা মতবাদী দার্শনিক ও পণ্ডিতরা গ্রহণ করেছিলেন। কারণ তার মতবাদে ছিল ‘সর্বজনীনতা’ ও ‘নিরপেক্ষতা’। বুদ্ধের অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে কোনো ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা ছিল না। ছিল না কোনো ধরনের বৈষম্য বা অসমতা। বলতে গেলে সে সময় বর্ণবাদী সমাজেও নানা পেশার মানুষ একই সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সমাজতান্ত্রিক মার্কসবাদে বুদ্ধের মতবাদটি সর্বাঙ্গীনভাবে গৃহীত হয়েছিল। বুদ্ধের সময় রাজ্য ও নগররাষ্ট্রের সবাই এবং শ্রেষ্ঠী, রাজা ও রাজকর্মচারীদের মধ্যেও এ বৈষম্যহীন প্রথা বলবৎ ছিল। বৌদ্ধমতে উপার্জিত অর্থকে চারভাগে ভাগ করা উচিত। এটি বৌদ্ধ সুষম অর্থবণ্টন নীতি। ব্যগ্ঘপজ্জ সূত্রে ইহজীবন ও পরজীবনের সুখ-শান্তির জন্য বুদ্ধ চারটি বিষয় সম্পর্কে বলেছিলেন-উৎসাহ, সংরক্ষণ, সৎলোকের সংশ্রব এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন।
অর্থনৈতিক অধিকার প্রশ্নে জ্ঞানীরা বলেছেন, অর্থ হলো এক কঠিন শিক্ষক, যে কাউকে অনুকম্পা দেখায় না। এ জন্যই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায় এবং নানা ধরনের অপরাধ, দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। তবে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। মহামতি বুদ্ধ তাই সুষম বণ্টন নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। কল্যাণকর রাষ্ট্রে সুস্থ অর্থনীতির জন্য পাঁচটি মৌলিক নীতির কথা বলা হয়েছে।
যেমন: ১. সৎভাবে অর্থ উপার্জন করা এবং আয়-ব্যয় চিন্তা করে তা খরচ করা। ২. যদিও ঋণগ্রস্ত হতে হয়, তা যেন প্রথম উদ্যোগেই শোধ করা হয়। ৩. সহজে ঋণগ্রস্ত না হওয়া এবং ঋণের অর্থ দিয়ে অধিক কেনাকাটা না করা। ৪. অতি প্রয়োজনীয় ব্যতিরেকে খরচ না করা এবং যা প্রয়োজন ততটুকুই ব্যয় করা। ৫. যত বেশি পারা যায় সঞ্চয়ী মনোভাব তৈরি করা এবং অর্থ ব্যয়ের সুচিন্তিত কৌশল অর্জন করা।
তবে বৌদ্ধ মতে, অর্থনৈতিক সমাজকাঠামো এমনভাবে করা উচিত, যেখানে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক সুবিচার সম্যক জীবিকার পূর্বশর্ত।
স্বাস্থ্য অধিকার
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। কারণ রাজ্যের প্রজারা কিংবা রাষ্ট্রের নাগরিকরা যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে সমাজ জীবনের কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনের সব পর্যায়ে উন্নতি-সমৃদ্ধি-প্রগতি বাধাগ্রস্ত হয় এবং আর্থ-সামাজিক সব স্থানে ধস নেমে আসে। অসুস্থ, দুর্বল, রুগ্ণ ও স্বাস্থ্যহীন নাগরিক ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক জীবনের কোনো কাজে সফলতা আনয়ন করতে পারে না। এজন্য তাদের সুস্থ, সুন্দর ও রুগ্ণহীনভাবে বাঁচার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক করণীয় থাকে।
বুদ্ধ একজন উত্তম স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ও চিকিৎসক ছিলেন। ত্রিপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে এগুলো লিপিবদ্ধ আছে। বুদ্ধের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রকৃতি-পরিবেশের অবদান অতুলনীয়। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার ও শিক্ষা বৌদ্ধধর্মে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। স্বাস্থ্য যে ‘সুখের মূল’ এবং ‘আরোগ্যই যে পরম লাভ’ বুদ্ধ এ বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন। তাই তো ধর্মপদে বলেছিলেন-
‘আরোগ্য পরম লাভা, সন্তুটঠি পরমং ধনং
বিস্সাস পরমাঞাতি নিব্বানং পরমং সুখং।’
অর্থাৎ আরোগ্য বা সুস্থতাই পরম লাভ, সন্তোষ বা সন্তুষ্টি পরম ধন, বিশ্বস্ত মিত্র পরম আত্মীয়, আর নির্বাণ হচ্ছে পরম সুখের স্থান।
বৌদ্ধ দর্শনতত্ত্বের আলোকে বলা যায়-দেহ ও মনের সম্পর্ক গভীর এবং ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই পঞ্চস্কন্ধের সংজ্ঞায় রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। দেহ ও মন পঞ্চস্কন্ধের সমষ্টি এবং দুটি অভিন্ন সত্তা। পঞ্চস্কন্ধের সমষ্টিকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন-নাম ও রূপ। মানুষ নামের এ ব্যক্তিটি ওই নাম-রূপ বা পঞ্চস্কন্ধের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়; এটাই বৌদ্ধ সিদ্ধান্ত।
বিনয় পিটকের মহাবর্গে ভৈষজ্য স্কন্ধে ভিক্ষু-শ্রামণদের স্বাস্থ্য রক্ষা, রোগের চিকিৎসা ও ভৈষজ্য সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা পাওয়া যয়। ভিক্ষুরা কীভাবে স্বাস্থ্য রক্ষার বিধিগুলো পালন করবেন তারও বর্ণনা আছে। যেমন পঞ্চ ভৈষজ্য, যথা-চর্ব্বি, নবনীত, তৈল, মধু ও গুড় ব্যবহারের নিয়ম-নীতি।
বুদ্ধ সব জীবের প্রাণকে মূল্যায়ন করেছেন। তাই বৌদ্ধশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু’-অর্থাৎ সকল জীব সুখী হোক। এই একটি মাত্র ক্ষুদ্র বাক্যে জীব জগতকে রক্ষা, সুরক্ষা, তাদের বাঁচার, জীবন ধারণের সব ধরনের অধিকারসহ সুখে নিরাপদে বসবাস করার আবেদন উচ্চারিত হয়েছে। জীবন বাঁচার, জীবন রক্ষার এবং জীবন মূল্যায়নের জন্য এর চেয়ে মহৎ আবেদন, মহৎ উক্তি আর কী হতে পারে!
রাজ নির্দেশেও বুদ্ধ প্রজাদের, অমাত্যবর্গের এবং রাজ-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলেন। যেমন বলেছিলেন ভিক্ষু সংঘের জন্য। এমনকি পশু-পাখি তথা জীবজগতেরও। প্রজাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও ‘সৎ জীবন’ গঠন বলতেই আহার, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি চলে আসে। এগুলো আদর্শ রাষ্ট্র বা আদর্শ সমাজের বৈশিষ্ট্য।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক