দূর করতে হবে বিনিয়োগের বাধা
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![দূর করতে হবে বিনিয়োগের বাধা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/08/Mirza-Azizul-Islam-67a675df5fffb.gif)
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৪ সাল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। ফলে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন পূর্বকালীন সময়টুকু দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। নানা কারণেই দেশের অর্থনীতি বর্তমানে জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে এ জটিলতা বা চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে আগামী দিনে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা বজায় থাকলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আহরণের গতি মন্থর হয়ে পড়তে পারে।
দেশের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের মতো দ্রুত বিকাশমান একটি অর্থনীতির জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে সাফল্যের হার খুবই কম। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জিত হয়নি। অনেকদিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২২ থেকে ২৩ শতাংশে ওঠানামা করছে। কোনোভাবেই এ অনুপাত বাড়ানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে প্রতি শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তি খাতে জিডিপির অন্তত ৪ থেকে ৫ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির ২৭ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির একটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস এবং গত বছরের জুলাই-আগস্ট ছাড়া পুরো সময়টাই রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল কার্যত স্থিতিশীল। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজমান ছিল। সেই রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। আগামী দিনে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূরীভূত হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কাজেই আগামী দিনে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরে আসবে, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা বিরাজ করছে বা স্থবিরতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, তা হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়নি। এটি অতীতের ধারাবাহিকতা মাত্র। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, এর কোনোটিই ইতিবাচক নয়।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। এর পরিবর্তে সংস্থাটি ‘বিজনেস রেডি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মোট ৫০ দেশকে বিবেচনায় নিয়ে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ সারিতে। বাংলাদেশের স্কোর হচ্ছে ১০০তে ৫৩ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। জাপানি একটি সংস্থা বাংলাদেশে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত জাপানি উদ্যোক্তাদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ৭০ শতাংশ জাপানিই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। বিদেশি উদ্বৃত্ত পুঁজির মালিকরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরিপকে বিশেষভাবে বিবেচনা করে থাকেন। বিদেশে বিনিয়োগ করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের পুঁজি হারানোর ঝুঁকি নিতে চাইবে না। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছা করলেই অন্য দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন না; কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে এ প্রতিবন্ধকতা নেই। তারা যে কোনো দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। কাজেই তারা বিনিয়োগের আগে পুঁজির নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জনের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করেন। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমে যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করেছিল; কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে ১৪৭ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপক দুর্নীতি, উদ্যোক্তাদের হয়রানি করা, পরিবহণ খাতে নৈরাজ্য ও পথে পথে চাঁদাবাজি, বন্দর ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতার অভাব, ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা ও বিলম্ব ইত্যাদি নানা কারণেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়া শিল্প-কারখানা স্থাপনের মতো উপযোগী জমির অভাব রয়েছে। নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এ অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, একটি প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন ও উৎপাদন শুরু করতে ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে খুব কম প্রকল্পই এত অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। ব্যাংকগুলো যখন কোনো প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ প্রদান করার পর ছয় মাস পর্যন্ত সময়ের জন্য তুলনামূলক স্বল্পহারে সুদারোপ করে, এ ব্যবস্থাকে বলা হয় নির্মাণকালীন সুদ বা ইন্টারেস্ট ডিউরিং কনস্ট্রাকশন পিরিয়ড। অর্থাৎ ব্যাংক মনে করে, ছয় মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি পূর্ণোদ্যমে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবে। কিন্তু দেশে খুব কম প্রকল্পই অনুমোদনের পর ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারে।
এরপর রয়েছে জ্বালানি সংকট। বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ স্বল্প সময়ে পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ পেতে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। উৎকোচ প্রদান ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের পক্ষে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নির্ধারিত সময়ে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও এগুলোর সরবরাহ অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ শিল্পকারখানাকেই নিজস্ব বিদ্যুৎব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে যায়। এসব সমস্যার কারণে বিনিয়োগকারীরা অধিকাংশ সময়ই দ্রুত উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না। সঠিক সময়ে দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে না পারলে বাজারে সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। এমনকি বাইরে থেকে এসব পণ্য এসে স্থানীয় বাজার দখল করতে পারে। একজন উদ্যোক্তা তার প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও লাভবান হতে পারবে না, যদি প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করতে না পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এলেও তাদের সবাই এখানে টিকে থাকতে পারেন না। নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে চলে যান। বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করেন, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই অবাস্তবায়িত থেকে যায়। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যেও অনেকেই তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হতোদ্যম হয়ে পড়েন।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই তাদের আমদানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবেই আমদানি কমানোর প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। তবে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসি পণ্যের আমদানি হ্রাস পাওয়া ভালো। কিন্তু শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমে গেলে সেটি নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের ব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের দেশে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ খুব একটা উৎপাদিত হয় না। এর প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। কাজেই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি হ্রাস পাওয়ার অর্থই হচ্ছে শিল্প খাতে স্থবিরতার লক্ষণ। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে, তা থেকে খুব সহসাই আমরা পরিত্রাণ পাব বলে মনে হয় না।
দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। আগামীতে এ অনিশ্চয়তা কমবে বলে মনে হয় না। বরং আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামীতে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা বা তাদের নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্ররা আগামীতে কী ভূমিকা পালন করবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, প্রায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। ব্যক্তি খাতে স্থানীয় বিনিয়োগ এবং বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের জন্য অনুকূল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ থাকা খুবই জরুরি। কোনো দেশে যদি সামাজিক সংঘাত চলতে থাকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ থাকে, তাহলে সেই দেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। কারণ, বিনিয়োগ করতে এসে কেউ প্রাণের ঝুঁকি নেবেন না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন শীতের অতিথি পাখির মতো। অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করে না, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ঠিক তেমনি কোনো দেশে পুঁজি ও জীবনের নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত মুনাফার নিশ্চয়তা না পেলে সেদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হন না।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করা হবে; আর অন্যান্য দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করা হবে। এটি আমাদের জন্য মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের একটি বড় বাজার। বিশেষ করে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসামগ্রীর একটি বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্কারোপ করে, তা আমাদের মতো দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। সেই অবস্থায় ভোক্তারা তুলনামূলক কম পরিমাণ পণ্য ক্রয় করবে, যা বাংলাদেশের মতো রপ্তানিকারক দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। তারপর ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে রপ্তানি বাণিজ্যে জিএসপি সুবিধা প্রদান করবে। এরপর জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহৃত হবে। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি সুবিধা বন্ধ করলেও তারা জিএসপি+ নামে এক ধরনের নতুন শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করবে। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারখানার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশকে এখন থেকেই জিএসপি+ সুবিধা পাওয়ার জন্য শর্তাবলী পূরণের চেষ্টা করতে হবে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। (অনুলিখন)
লেখক : অর্থনীতিবিদ; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা